যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে নিরাপত্তা জোট গড়ার চুক্তি ‘অকাস’ এর কারণে ক্ষতির শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানো ফ্রান্সের সঙ্গে বরফ গলাতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোর সঙ্গে বৈঠক করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
শুক্রবার ইতালির রোমে ভ্যাটিকানস্থ ফরাসি দূতাবাসে দুই প্রেসিডেন্ট এই বৈঠক করেন। ম্যাক্রোকে অকাস চুক্তি নিয়ে বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একেবারেই আনাড়ির মতো এই চুক্তি করেছে।
বিবিসি জানায়, অকাস চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে বিরোধের পর ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বাইডেনের এটিই প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। এ সপ্তাহে জি-২০ সম্মেলনের প্রাক্কালে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বাইডেন এ বৈঠক করলেন।
সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্য নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নেতারা যৌথ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে একটি নিরাপত্তা চুক্তির মধ্য দিয়ে ‘অকাস’ নামের ত্রিপক্ষীয় জোট গড়ার ঘোষণা দেন।
চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের। আর এখানেই ক্ষুব্ধ হয়েছে ফ্রান্স।
কারণ, অস্ট্রেলিয়া ১২টি সাবমেরিন পেতে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ২০১৬ সালে। অকাস চুক্তির পর ফ্রান্সের সঙ্গেকার সেই সাবমেরিন চুক্তিটি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফ্রান্স।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে এক মন্তব্যে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ফ্রান্সের পিঠে ছোরা বসানোর মত কাজ করেছে।” এরপর এ নিয়ে বিরোধে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে রাষ্ট্রদূতও ফিরিয়ে নিয়েছিল ফ্রান্স।
পরে ফ্রান্স আবার তাদের রাষ্ট্রদূতকে ক্যানবেরায় ফেরত পাঠায় এবং ৩০-৩১ অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে রোমে বৈঠকে করে সম্পর্ক মেরামত করে নেওয়ার আশা প্রকাশ করেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
সেই বৈঠকেই শুক্রবার সাক্ষাৎ হল দুই নেতার মধ্যে। ম্যাক্রোঁকে বৈঠকে বাইডেন বলেছেন, “আমরা যা করেছি তা ছিল তালগোল পাকানো। যথেষ্ট বিচক্ষণতার সঙ্গে এটি করা হয়নি। আমি মনে করেছিলাম কিছু জিনিস ঘটেছে, যেটি আসলে ঘটেনি।”
এ কথার মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে মূলত ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে ফ্রান্সকে যুক্তরাষ্ট্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন অংশীদার হিসাবেও উল্লেখ করেছেন বাইডেন।
এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত হওয়া নিয়ে ফ্রান্স সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদেরকে ম্যাক্রোঁ বলেন, “আমাদের যে বিষয়টিতে পরিস্কার হয়ে নেওয়া দরকার ছিল, তা আমরা একসঙ্গে বসে করে নিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যতে যেন এরকম পরিস্থিতি দেখা না দেয় সেটি নিশ্চিত করাটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “আসছে সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলোতে আমরা একসঙ্গে কী কী করব মূলত সেটিই এখন বিষয়।”
অকাস চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র এর আগে কয়েকবার সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা নিয়েছিল। এ মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মার্র্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনও প্যারিস সফরে গিয়ে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করেন।
তাছাড়া, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও আগামী মাসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে দেখা করতে প্যারিস সফরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।