অনলাইনে আয়কর দেয়ার উপর জোর প্রধান উপদেষ্টার

images (2)

দেশবাসীকে অনলাইনে আয়কর দিতে অনুপ্রাণিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সব তফসিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশকিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এভাবে আয়কর রিটার্ন দেয়া এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দেশের বাকি সবাইকে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।

গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের দেয়া করই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এখন থেকে ব্যাংকে লাইন দিয়ে আয়কর জমা দেয়া বা আয়কর অফিসে গিয়ে রিটার্ন জমা দেয়ার ঝামেলা করতে হবে না। ঘরে বসেই আয়কর জমা দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান কত বেশি করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জনের জন্য জেলায় জেলায়, শহরে শহরে প্রতিযোগিতা হোক। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবকে শিখিয়ে দিন কীভাবে ঘরে বসে অনলাইনে ই-রিটার্ন ও আয়কর জমা দিতে হয়। ড. ইউনূস বলেন, আমি তরুণ-তরুণীদের এ ব্যাপারে করদাতাদের সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করছি। ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হওয়ার প্রস্তুতি এখান থেকেই শুরু হতে পারে। ধীরে ধীরে অনলাইনে সব কর আদায়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি সবার জন্য আয়কর দেয়ার অভিজ্ঞতা মসৃণ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগ চান ড. ইউনূস: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সৌদি আরবকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে একইসঙ্গে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আল দুহাইলান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আমরা এমন একটি সময় পার করছি, যখন সৌদি আরব আমাদেরকে সর্বোচ্চ সমর্থন দিতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘অনন্য’ ও ‘আলাদা’ হিসেবে অভিহিত করেন। ড. ইউনূস সৌদি আরবকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তহবিল জমা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ তারল্য সহায়তা বৃদ্ধি করবে। এছাড়া এটি ‘অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি চমৎকার অঙ্গীকার’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি সৌদি আরবকে সহজ শর্তে জ্বালানি ও পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ, ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণ এবং বাংলাদেশি তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য বিনিয়োগ করলে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে তারা আরও বেশি বেতন পাবেন এবং দেশে অনেক বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত আছেন এবং প্রতি বছর তারা বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান জানান, সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ভিসা প্রদান করে, যা বাংলাদেশি অভিবাসী এবং মুসলিম হজযাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

গত ২০২৩ সালে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে ওমরাহ্‌ পালন করেছেন, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রদূত আল দুহাইলান জানান, তার দেশ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিশেষ করে আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রস্তাবিত সৌদি বিনিয়োগ সহজ করতে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সহযোগিতা চান। তিনি সৌদি আরবের বাদশাহ্‌ খাদেমুল হারামাইন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সৌদি জাতীয় দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমার সরকার বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় এবং ইনশাআল্লাহ্‌, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে পবিত্র আল-কোরআন ও সৌদি আরবের জাতীয় পাখি বাজপাখির একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।

Pin It