বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান ও অধিনায়কদের একজন হাবিবুল বাশার। খালেদ মাসুদকে দেশের ইতিহাসের সেরা উইকেটকিপার বললে, দ্বিমত করার সুযোগ থাকবে সামান্যই। একটি আক্ষেপ থাকতে পারে দুজনেরই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনোই ম্যাচ সেরা হতে পারেননি দুজনের কেউ। এই অপ্রাপ্তিই তাদের জায়গা করে দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডের সবার ওপরে।
ক্যারিয়ারে ১২৬টি ওয়ানডে খেলেছেন মাসুদ, টেস্ট ৪৪টি। একবারও ম্যান অব দা ম্যাচ না হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড এটিই; মোট ১৭০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
এই রেকর্ডে মাসুদের ঠিক পড়েই হাবিবুল। খেলেছেন ১৬১ ম্যাচ (৫০ টেস্ট, ১১১ ওয়ানডে)।
এই দুজনের সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতা অবশ্য ছিল ভীষণ কঠিন। বেশির ভাগ ম্যাচে দল মাঠে নামত স্রেফ লড়াই করতে, কিংবা সম্মানজনক পরাজয়ের জন্য। ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে নিজেকে তুলে নেওয়া ছিল কঠিন। তারপরও একবারও এই স্বাদ না পাওয়া বিস্ময়কর। তাদের সময়ে বড় দলগুলির পাশাপাশি ক্ষয়িষ্ণু জিম্বাবুয়ে ও অন্য সহযোগী দেশগুলির বিপক্ষেও তো খেলেছে বাংলাদেশ!
সামর্থ্য দুজনেরই ছিল। টেস্ট জমানায় প্রথম কয়েক বছর তো দলের ব্যাটিং বলতে গেলে পুরোটাই নির্ভর করত হাবিবুলের ওপর। মাসুদ শুধু উইকেটের পেছনেই নির্ভরতা ছিলেন না, উইকেটের সামনেও ছিলেন লড়াইয়ের প্রতীক। তার ব্যাটে অনেকবারই দল উদ্ধার পেয়েছে বিব্রতকর অবস্থা থেকে।
অবশ্য ম্যান অব দা ম্যাচ না হলেও একবার ম্যান অব দা সিরিজ হয়েছিলেন মাসুদ। চোখধাঁধানো কোনো পারফরম্যান্স অবশ্য ছিল না। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মোট ১০২ রান করেছিলেন মাসুদ। তিন ম্যাচে ক্যাচ ছিল মোটে দুটি। তবে বাংলাদেশের চরম দুর্দাশার সিরিজে তিনিই একটু লড়াই করেছিলেন ব্যাট হাতে। সান্ত্বনা হিসেবেই হয়তো সিরিজ সেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তাকে।এই রেকর্ডের প্রথম পাঁচের বাকি তিনজনই উইকেটকিপার। ১৪৩ ম্যাচ খেলেছেন কিরন মোরে, ১৩৭ ম্যাচ সৈয়দ কিরমানি ও ১৩২টি ওয়াসিম বারি। কেউ কখনও হতে পারেননি ম্যাচ সেরা।
দুটি কারণ বড় ভূমিকা রেখেছে তাদের এই অপ্রাপ্তিতে। তাদের সময়ে ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কারই দেওয়া হতো কদাচিৎ। আর কিপারদের ব্যাটিংকে তখন মনে করা হতো ‘বোনাস।’ বেশির ভাগই ছিলেন কাজ চালানোর ব্যাটসম্যান। শুধু কিপিং দিয়ে ম্যাচ সেরা হওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব।
সংস্করণ আলাদা করে দেখলেও তাই এই রেকর্ডে কিপারদের নামই বেশি। ওয়ানডেতে রেকর্ডটি নয়ন মঙ্গিয়ার। সাবেক ভারতীয় কিপার ১৪০ ওয়ানডে খেলে ম্যাচ সেরা হতে পারেননি। এরপরই মাসুদ, ১২৬ ওয়ানডে। ১২২ ওয়ানডে খেলে পাননি সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান কিপার ডেভ রিচার্ডসন।
ওয়ানডের তালিকায় চতুর্থ নামটি একটু বিস্ময়কর। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার আগে বিশ্বের তাবত ব্যাটসম্যানকে ভুগিয়েছেন সাঈদ আজমল। কিন্তু সাবেক পাকিস্তানী অফ স্পিনার ১১৩ ওয়ানডে খেলে হতে পারেননি সেরা।
টেস্টের ক্ষেত্রে এই রেকর্ড স্রেফ পরিসংখ্যানের বিবেচনায় দেখাটা অন্যায্য। টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম ১০০ বছরে তো ম্যান অব দা ম্যাচের প্রচলনই ছিল না সেভাবে!
গত সত্তুরের দশকের শেষার্ধ থেকে টুকটাক এই স্বীকৃতি দেওয়া শুরু হয়, আশির দশকের শেষ ভাগে হয়ে ওঠে নিয়মিত।
ইংলিশ কিংবদন্তি কলিন কাউড্রে ১১৪ টেস্ট খেলেছেন, অফিসিয়ালি এই রেকর্ডও তার। কিন্তু তার সময়ে ম্যাচ সেরা বলে কিছু ছিলই না!
কাউড্রের ক্যারিয়ার শেষ ১৯৭৫ সালে। টেস্ট ক্রিকেট প্রথম ম্যান অব দা ম্যাচ পুরস্কারের স্বাক্ষী হয় ১৯৭৬ সালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মেলবোর্নে ১০১ ও ৭০ রানের ইনিংস খেলে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ইয়ান রেডপাথ। মজার ব্যাপার হলো, রেডপাথের সেটি ছিল ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট!
আশির দশকের পরে যাদের ক্যারিয়ার শুরু, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪ টেস্ট খেলে ম্যাচ সেরা হতে পারেননি দিনেশ রামদিন। ৬৯ টেস্ট খেলে পারেননি পাকিস্তানের মঈন খান, ৬৮ টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের পল কলিংউড।