অনাগ্রহের ভোটে শেষ হাসি কার

Untitled-2-5c76ba14655f7

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচন ও দক্ষিণ সিটির বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে বুধবার ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেওয়া হবে। রাজধানীর দুই সিটিতে এই ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। তবে নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার দুই সিটির পুরো অংশেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে এলাকায় সব ধরনের যন্ত্রচালিত বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকলেও এই নির্বাচনে অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল প্রার্থী না দেওয়ায় নির্বাচনী প্রচারে কোনো উত্তাপ ছিল না। উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম জানিয়েছেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই ভোটে নির্বাচিতরা দায়িত্ব পালনের জন্য এক বছরের মতো সময় পাবেন। কারণ, এক বছর পরেই এই করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

গত দু’দিন ধরেই ভোটের তুলনায় ছুটি ও যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রায় সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বুধবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সংবাদ সম্মেলনেও ভোটের পরিস্থিতি চেয়ে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। সিইসি বলেছেন, ব্যাপকভাবে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। যুক্তিসঙ্গত কারণে যান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়কে বাস চলতে পারবে। এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম, সেটা স্বীকার করে নিয়েই তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, সব দল প্রার্থী দিলে ইসি খুশি হতো; কিন্তু বর্জন করায় ইসির জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

কারও কারও মতে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন’ এই নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ কম। গত তিন দিনের মতো আজও রাজধানীতে বৃষ্টি হলে ভোটার উপস্থিতির আশা নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে দুই সিটির পুরো অংশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হবে। ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান আরজু জানান, দক্ষিণ সিটির আংশিক এলাকায় নির্বাচন হলেও উত্তর সিটির মতো দক্ষিণ সিটির পুরো এলাকায় ২৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টা যন্ত্রচালিত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

তবে নির্বাচন কমিশনের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এলাকার মহাসড়ক, আন্তঃজেলা বা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং প্রধান প্রধান রাস্তার সংযোগ সড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। এ ছাড়া কতিপয় জরুরি কাজ, যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চালাচল এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। ইসির অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শকের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। দুই সিটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও দেশজুড়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সংশ্নিষ্টরা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবেন।

আজকের ভোটে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টি-জাপার লাঙ্গল প্রতীকে শাফিন আহমেদ, আম প্রতীক নিয়ে এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এবং পিডিপির শাহীন খান বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৭২ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ২৪ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োজিত রয়েছেন। বিচারিক হাকিম রয়েছেন ২৪ জন।

উত্তরের ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১৬ প্রার্থী, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৫ প্রার্থী এবং দক্ষিণের ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৫ প্রার্থী ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর পাশাপাশি উত্তর সিটির ৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে শুধু মেয়র পদে ভোট হবে। উত্তর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ ও নারী ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন।

উত্তরে বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডে ভোটার পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৭৯ হাজার ৩৫ ও নারী দুই লাখ ৮২ হাজার ৬৪৯ জন। অন্যদিকে, দক্ষিণে বর্ধিত ১৮ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ ও মহিলা দুই লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।

ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল উত্তর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন ১৬ জন। এবার প্রার্থী মাত্র পাঁচজন। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ৩৯টি নিবন্ধিত দলের প্রার্থী ছিল। উত্তরে এবারের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে মাত্র চারটি দল। আরেকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এর আগে নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার আগেই ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচন ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের নির্বাচনও স্থগিত করেন হাইকোর্ট। গত ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট জানান, নির্বাচনে বাধা নেই। এরপর নির্বাচন কমিশন ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করে।

প্রথমবার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাল-জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।

৩০ ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনের পর এই নির্বাচনে অনেক দল অংশ নিচ্ছে না- এ প্রসঙ্গে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, বিভিন্ন কারণে তারা অংশ নেয়নি। একটা কারণ হলো, মাত্র এক বছর মেয়াদে তারা নির্বাচিত হবেন। এরপর আবার নির্বাচন হবে। সে কারণে ভোটার ও প্রার্থীদের আগ্রহ কম থাকতে পারে। আর সব দল অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ইসির কিছুই করার নেই।

বিএনপির নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসির কোনো ব্যর্থতা নেই; কোনো দুর্বলতা নেই। সঠিক নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারা রাজনৈতিক মাঠে না গেলে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

Pin It