বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ অনেক দুর্বল হয়ে গেলেও আগামী নির্বাচন দেশের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে কঠিন হতে যাচ্ছে। কারণ, মানুষের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাই আপনাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে জনগণের সমর্থন আপনার প্রতি ও দলের প্রতি থাকে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন আমরা ক্ষমতায় চলে যাচ্ছি বা চলে গেছি। এটা কিন্তু ঠিক না। আমরা ক্ষমতায় যাইনি। তখনই আমরা ক্ষমতায় যেতে পারব, যখন আমরা জনগণের সমর্থন পাব। তাই জনগণের সমর্থন আমাদের আদায় করতে হবে। জনগণের সমর্থন পেতে হলে আপনার কথা, আচরণ, ওঠাবসা, কথাবার্তাসহ সবকিছুর ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে কি না। এজন্য জনগণের আস্থা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সোমবার খুলনা ও ময়মনসিংহে ‘রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি প্রদত্ত ৩১ দফা’র বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহস্রাধিক নেতা এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন।
খুলনা প্রেস ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে দিনব্যাপী বিভাগীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি কোনো ভুল করে থাকে, তাহলে একজন নেতা হিসাবে তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা আপনার দায়িত্ব। সব নেতাকে ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ এবং কৃষকদের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’ তৈরি করব। ফ্যামিলি কার্ডটি হবে পরিবারের মা অথবা স্ত্রীর নামে। এতে তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। একই সঙ্গে কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড করা হবে, যা প্রতি মৌসুমে কৃষকের সার-বীজ বা আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তিতে কাজে লাগবে।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। নেতাকর্মীদের সব কর্মকাণ্ড হচ্ছে বিএনপির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে এমন হতে হবে যাতে জনগণ আপনার সঙ্গে থাকে, বিএনপির সঙ্গে থাকে। দলকে রক্ষা করা, সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সবার। তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে সমাজের কিছু ব্যক্তি সংস্কারের কথা বলছেন। ৫ মাস আগেও তারা বলেননি। কিন্তু বিএনপি দুই বছর আগে থেকে বলছে। বিএনপি দেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করে। ৩১ দফা তারই প্রমাণ। ৩-৪ মাস ধরে সংস্কারের যে কথা বলছে, এর সবকিছুই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। এই ৩১ দফা শুধু বিএনপির নয়, বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক সব দলের। ৩১ দফা সফল করতে যে কোনো মূল্যে জনগণের সমর্থন রাখতে হবে। ৩১ দফার সবকিছু জনগণের মাঝে নিয়ে যেতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, নারীর যোগ্যতা ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করা উচিত। এটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা উচিত। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে নারীদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা ফ্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করব। প্রান্তিক মানুষকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবে। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ, নদী ও খাল খনন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলায়ও এগিয়ে নেওয়া হবে। তিনি ৩১ দফার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন নেতাকর্মীদের কাছে। তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য। বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য নয়। দেশের সম্পদ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটি আমরা চেষ্টা করব।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূল প্রশিক্ষক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন এবং উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব মো. শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ। বিভাগীয় এ কর্মশালায় খুলনা অঞ্চলের ১০টি জেলা এবং একটি মহানগরের এগারোটি ইউনিট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা দিনভর স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহে বিভাগীয় কর্মশালা : সোমবার নগরীর টাউনহলের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক বিএনপির বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এর আগে সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। দলের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, সাবেক সংসদ-সদস্য রেহানা আক্তার রানু, লাইলা বেগম, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকারসহ বিএনপির বিভাগীয়, জেলা ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এতে ময়মনসিংহ বিভাগের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩৬০ ডেলিগেট অংশগ্রহণ করেন।