অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে: ফখরুল

image-613116-1667749346

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘অন্যায়-অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকারের পতন ঘটাবই। বিজয় আমাদের হবেই। সরকারের দমন-পীড়নে গণজাগরণ দমানো যাবে না বলেও হঁশিয়ার করেন বিএনপি মহাসচিব।

রোববার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে’ এ সমাবেশ হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়না-এটা আমি কোনো গুরুত্ব দেই না। কারণ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা, অসংখ্য মামলা, তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাতে কি তারেক রহমানের কিছু যায় আসে? দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বরিশাল থেকে ফেরার পথে সকালে মহিলা দলের দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানাকে রাজধানীর টিকাটুলি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার যাওয়ার সময় গৌরনদীতে ইশরাক ও তার সঙ্গে যারা ছিল তাদের গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে। আবার উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সারা দেশে চলমান আন্দোলন চলাকালে ভোলায় ছাত্রদলের নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে যুবদলের শাওন, মুন্সীগঞ্জে শাওন ও যশোরে আবদুল আলীমকে হত্যা করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ ছয়শ মানুষকে গুম করা হয়েছে। হাজারও মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। এই হত্যা, নির্যাতন করে আমাদের কি দমিয়ে রাখতে পেরেছে? পারেনি। বাংলাদেশের মানুষকে কি দমানো সম্ভব হয়েছে? হয়নি, হবেও না।

মির্জা ফখরুল বলেন, একটা কথা আছে ‘সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়’। আমি তো সমুদ্রে বাসা বেঁধেছি। সুতরাং এক ফোটা শিশিকে ভয় পাই না। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ ওই শপথ নিয়ে জেগে উঠেছে। এই ভয়াবহ দানবীয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পতন ঘটাবেই ঘটাবে।

বিএনপির বরিশালের সমাবেশের দুটি চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই দিন সমাবেশে একজন বয়স্ক মানুষ তিন দিন ধরে শুয়ে ছিলেন। তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, আপনি এত কষ্ট করে কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমার ঘরে খাওয়া নেই, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমার ভাতের ব্যবস্থা হবে। আরেকজন বয়স্ক নারী সমাবেশে এসেছিলেন বহু কষ্ট করে, তার কাছে জানতে চাওয়া হলো আপনি কেন এসেছেন মা? তিনি বলেন, আমি পরিবর্তন দেখতে এসেছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান এবং তার শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু এই তিন জনের নামে দুর্নীতির মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। আমি অবাক হলাম দুর্নীতি মামলার চার্জশিট হঠাৎ কোথায় পেল। তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান থাকেন লন্ডনে। দুর্নীতি কী ওখানে করল। আমি চিন্তা করে দেখি এই দুর্নীতি নাকি তারা ২০০৮ সালে করেছে, এখন ২০২২ সাল। এই সরকার কবর খুঁড়ে বের করেছে দুর্নীতির মামলা তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে। তারেক রহমানের দুর্নীতি মামলা কবর খুঁড়ে বের করেছেন, আপনাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে হচ্ছে। এই দেশের জনগণ জানে আপনারা কিভাবে দুর্নীতি করছেন। লুট করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক, শেয়ার বাজার, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যদিয়ে সারাদেশের জনগনের পকেট কেটেছেন।

বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, সভা সমাবেশে বাধা দেন কিন্তু রামপুরা ইউলুপে মিটিং করেছেন, লজ্জা লাগে না? তারেক রহমান লন্ডন থেকে আন্দোলন করছেন, জ্বালা ধরছে? বলছিলেন, খালেদা জিয়া না থাকলে বিএনপি থাকবে না। খালেদা জিয়ার পর বিএনপির দায়িত্বে তারেক রহমান-আপনাদের সহ্য করতে হবে। তারেক রহমান দেশে আসবে এবং দেশকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা দুর্নীতি করেন না, তাদেরকে দুর্নীতিবাজ বানানো হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী কী ধোয়া তুলসি পাতা? তিনি কি দুর্নীতি করেন নাই? ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) কত টাকা নিয়ে ধরা পড়েছিলেন? সুতরাং বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ সরকার। তারা উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলে নিম্নআয়ের দেশ বানিয়েছেন। এ জন্যই ওবায়দুল কাদের বলেছেন- তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে চান না। তাকে সাধুবাদ জানাই। কারণ পালানোর তো পথ পাবেন না। ওদের সময় শেষ, জনগণের বাংলাদেশ।

বেলা ২টা থেকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যানার-ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে জড়ো হন যুবদলের হাজারও নেতাকর্মী। তারা খালেদা জিয়াসহ অন্য নেতাদের মুক্তি এবং তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবিতে নানা স্লোগান দেন।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নার পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহীন, ইসহাক সরকার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

Pin It