এমনিতে এই ম্যাচের মূল্য খুব একটা ছিল না। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে কোনো ম্যাচই তো গুরুত্বহীন নয়! আগেই ফাইনালে পা রাখা বাংলাদেশের এজেন্ডা ছিল বেশ কিছু। চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মিলে গেছে অনেকটাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ধরা দিয়েছে জয়। পোক্ত হয়েছে বিশ্বাস। অপরাজেয় থেকেই ফাইনালের মঞ্চে নামছে বাংলাদেশ।
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচের তিনটিতে জয়, একটি পরিত্যক্ত; সাফল্য রথে চড়েই শুক্রবার শিরোপার লড়াইয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
চারটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। জয়ে অবদান আছে তাদের সবারই। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স তার, যিনি পেয়েছিলেন দ্বিতীয় সুযোগ। আগের ম্যাচে অভিষেকে বিবর্ণ আবু জায়েদ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। হয়েছেন ম্যাচের সেরা। বিশ্বকাপের আগে নিজে পেয়েছেন বিশ্বাস, দলকে দিয়েছেন স্বস্তি।
সুযোগ পাওয়া অন্যদের মধ্যে রুবেল হোসেন দলকে এনে দিয়েছেন প্রথম ব্রেক থ্রু। ৮ ওভার স্পিনে ৩২ রান দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তার বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন ২ ব্যাটসম্যান। চোট কাটিয়ে ফিরে সাইফ উদ্দিন নিয়েছেন ২ উইকেট। তামিম ইকবালের সঙ্গে শতরানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পাশাপাশি নান্দনিক ব্যাটিংয়ে লিটন দাস খেলেছেন ৭৬ রানের ইনিংস।
তবে অনেক প্রাপ্তির মাঝেও একটি জায়গায় আক্ষেপ থেকেই গেল। রান তাড়ায় একটুও ভুগতে হয়নি বাংলাদেশকে। তবে টপ অর্ডারে বড় ইনিংস এলো না এ দিনও। জয়ের ব্যবধান হতে পারত আরেকটু বেশি। ফিফটির পর শরীরের পেছন দিকে টান লাগায় অবসরে যাওয়া সাকিব আল হাসানকে নিয়েও থাকল খানিকটা শঙ্কা। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচও পড়েছে কয়েকটি।
আগের তিন ম্যাচের মতোই টস হেরে শুরু বাংলাদেশের ম্যাচ। আগে ব্যাটিংয়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি এ দিনও।
সাইড স্ট্রেইন কাটিয়ে টুর্নামেন্টে প্রথম খেলতে নামা রুবেল চতুর্থ ওভারে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ওপেনার জেমস ম্যাককলামকে।
তিনে নেমে অ্যান্ড্রু বালবার্নি শুরুটা করেছিলেন ভালো। তাকে ২০ রানে ফিরিয়ে আবু জায়েদ দেখা পান প্রথম উইকেটের।
স্টার্লিং শুরু থেকেই খেলছিলেন দুর্দান্ত। তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক পোর্টারফিল্ড। দুজনের জুটি এগিয়ে নেয় দলকে।
স্টার্লিং সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১২৬ বলে। রান খরায় ভুগে ওপেনিং থেকে চারে নেমে আসা পোর্টারফিল্ড ফিফটির দেখা পান ১৩ ইনিংস পর।
শেষ দিকে হাত খোলেন দুজনই। ৬ নম্বর বোলার হিসেবে আক্রমণে এসে প্রথম ৭ ওভারে ২৯ রান দিয়েছিলেন মাশরাফি। তার অষ্টম ওভারে আসে ১৯ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের সবচেয়ে খরুচে ওভার করেন সাকিব; এক ওভারে দেন ২৩ রান।
দুজনের জুটি ছাড়িয়ে যায় তৃতীয় উইকেটে আইরিশদের আগের রেকর্ড ১৩৮ রানকে। শেষ পর্যন্ত ১৭৪ রানের জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ। ১০৭ বলে ৯৪ করে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন পোর্টারফিল্ড।
৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪১ বলে ১৩০ রান করে থামেন স্টার্লিং। শেষ দিকে দ্রুত রান এসেছে। উইকেটও পড়েছে। মূলত নতুন বলের কার্যকারিতার জন্য দলে নেওয়া হলেও আবু জায়েদ স্লগ ওভারে ৪ উইকেট নিয়ে পূর্ণ করেছেন ৫ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে আইরিশরা তুলেছে ৯৯ রান।
এই উইকেটে প্রতিপক্ষকে তিনশর নিচে আটকে রাখাও কম নয়। টুর্নামেন্টে কেবল বাংলাদেশের বিপক্ষেই তিনশ করতে পারল না প্রতিপক্ষ। আগের দুই ম্যাচের মতো রান তাড়ায় বাংলাদেশ ছুটেছে দাপটে।
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ, নেই রান রেটের চাপ। দুজনের সামনেই ছিল তিন অঙ্কের হাতছানি। পারেননি কেউ। ৫৩ বলে ৫৭ করে তামিম বল টেনে এনেছেন স্টাম্পে। ৬৭ বলে ৭৬ করে লিটন বোল্ড হয়েছেন ব্যারি ম্যাককার্থির ইয়র্কারে।
তাতে জিততে কোনো বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। সাকিব-মুশফিকরা দলকে এগিয়ে নিয়েছেন জয়ের পথে।
দুজনেই শেষ করে আসতে পারতেন কাজ। কিন্তু আইরিশ কিপারের দুর্দান্ত ক্যাচে থামতে হয়েছে ৩৩ বলে ৩৫ রান করা মুশফিককে। এরপর সাকিব মাঠ ছাড়েন ব্যথায়।
সাব্বির রহমানের আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে মোসাদ্দেক হোসেন টিকতে পারেননি জয় পর্যন্ত। সেই আক্ষেপ আড়াল হয়েছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ২৯ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে দলের মূল ফিনিশার শেষ করে এসেছেন ম্যাচ।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দিয়েছে বার্তা। দল প্রস্তুত ফাইনালের জন্য, প্রস্তুত বিশ্বকাপের জন্য।
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (স্টার্লিং ১৩০, ম্যাককলাম ৫, বালবার্নি ২০, পোর্টারফিল্ড ৯৪, ও’ব্রায়েন ৩, অ্যাডায়ার ১১, উইলসন ১২, ডকরেল ৪, ম্যাককার্থি ১; আবু জায়েদ ৯-০-৫৮-৫, রুবেল ৭-২-৪১-১, সাইফ ৯-০-৪৩-২, মোসাদ্দেক ৮-০-৩২-০, সাকিব ৯-০-৬৫-০, মাশরাফি ৮-০-৪৭-০)।
বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ২৯৪/৪ (তামিম ৫৭, লিটন ৭৬, সাকিব ৫০ (আহত অবসর), মুশফিক ৩৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫*, মোসাদ্দেক ১৪, সাব্বির ৭*; অ্যাডায়ার ১০-০-৫২-১, ম্যাককার্থি ১০-০-৬১-১, লিটল ৮-০-৬৭-০, র্যানকিন ৭-০-৪৮-২, ডকরেল ৮-০-৫৭-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী ।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আবু জায়েদ ।