রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের ছেলে হিসেবে নয়; মানবিক-সাংস্কৃতিক গুণাবলীতেই শেখ কামাল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন বলে মন্তব্য এসেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআইয়ের আয়োজনে এক ওয়েবিনারে।
বুধবার রাতে ‘তারুণ্যের জেগে উঠার নাম শেখ কামাল’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গণে শেখ কামালের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন আলোচকরা।
সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন নাট্য আন্দোলনের কর্মী নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক মহাপরিচালক ও এফডিসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. হামিদ, ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান, ক্রীড়া সংগঠক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ এবং ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মণ্ডল।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে টগবগে তরুণ শেখ কামাল ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে নিয়মিত মুখ। আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে তার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ওয়েবিনারে স্মরণ করেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
তিনি বলেন, “কামাল খুব তড়িৎ গতিতে কর্মীদের আন্দোলিত করতে পারত।”
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করতে শেখ কামাল কতটা নিবেদিত ছিলেন তা উঠে আসে একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা বাচ্চুর স্মৃতিচারণে।
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান হওয়ার পরও নিজেকে প্রকাশ করার বিষয়টা কামালের মধ্যে ছিল না।”
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের শুরুতে শেখ কামালকে কাছ থেকে দেখেছেন ম. হামিদ। ১৯৭২ সালে নাটকের দল নাট্যচক্র গঠিত হলে শেখ কামালও তার অগ্রভাগে ছিলেন।সেই সময়ের কথা স্মরণ করে ম. হামিদ বলেন, “দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান… সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর ছেলে তিনি। কিন্তু তার কোনো প্রভাব তার চলাফেরায়, আড্ডায় বা ঘোরাফেরায় পড়ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রের মতো তিনি করিডোরে হেঁটে যেতেন। মজা, রসিকতায় তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।”
নাট্যচক্রের ‘রোলার এবং নিহত এলএমজি’ নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন শেখ কামাল। ম. হামিদের নির্দেশনায় ‘দানব’ নাটকে শিল্পপতির ভূমিকায় তার অভিনয় দারুণ প্রশংসা পায়। সে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে খোলা মঞ্চে।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ্লাপুত ম. হামিদ বলেন, “সত্যি সেদিন তাকে প্রিন্সের মত লাগছিল। তিনি তো সত্যি আমাদের রাজপুত্র ছিলেন।”
সে সময় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ম. হামিদ ছিলেন ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক। আর শেখ কামাল ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতা।
“আমরা ভিন্ন মতবাদের হলেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বে তা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।”
শেখ কামাল পরে আজম খানদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল স্পন্দন।
ম. হামিদ বলেন, “তার (শেখ কামালের) সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছিল রাজনীতির পাশাপাশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ বজায় রেখে তা সংস্কৃতিবান্ধব করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।”
সাংবাদিক অঘোর মণ্ডল বলেন, “ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায়, একটা প্রজন্মকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল মিথ্যাচারে, বিভ্রান্তিতে। মানুষের সামনে স্বচ্ছ ছবিটা এখন আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে আবির্ভূত হচ্ছেন শেখ কামাল।”
এই ক্রীড়া সাংবাদিকের ভাষায়, “সময় যদি হয় থার্ড আম্পায়ার, তবে নানা বিশ্লেষণে তিনি বলবেন, শেখ কামাল অপরাজিত।”