আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা ‘কালো টাকা’ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “চলতি বাজেটে অর্থের উৎস নিয়ে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন করার বিধান উঠিয়ে দিয়ে বৈধ উপায়ে অর্জিত ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ‘কালো টাকার’ মধ্যকার ফারাক একাকার করে দেওয়া হয়েছে।
“কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ অনির্দিষ্ট মেয়াদে রাখার পরিকল্পনা দেশের কর ব্যবস্থায় ন্যায় ও ন্যায্যতার প্রশ্নকে প্রকট করে তুলবে এবং দুর্নীতিবাজদের জন্য করোনাকালীন সময়ে নতুন প্রণোদনা হিসেবে বিবেচিত হবে।“
এমন পদক্ষেপকে ‘অপরিণামদর্শী’ ও ‘আত্মঘাতী’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে এই পরিকল্পনা থেকে আগামী বাজেটে সরকার সরে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ গণনার মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, “ওটা কালো টাকা নয়, অপ্রদর্শিত টাকা। যতদিন প্রদর্শিত না হবে, ততদিন কন্টিনিউ করবে। আমাদের সিস্টেমের কারণে অনেক সময় অপ্রদর্শিত টাকা সিস্টেমে চলে আসে।
“এগুলোকে যদি রেগুলারাইজ না করা হয়, মেইন স্ট্রিমে না নিয়ে আসা হয়, তাহলে যেখান থেকে টাকাটা চলে গিয়েছিল, সেখানে কিন্তু প্রপার ওয়েতে ট্রিটমেন্ট পাবে না।”
শনিবার বিবৃতিতে টিআইবি আরও বলেছে, “দীর্ঘমেয়াদে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের ব্যক্তি করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি তৈরি করবে।
“এতে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ না রাখায় দেশে দুর্নীতিসহায়ক একটি উদার পরিস্থিতি তৈরি হবে, যা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানকে দুর্বল করার মাধ্যমে আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে কোনো চেষ্টাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।“
বিবৃতিতে এসব শঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ নীতির প্রতি সামঞ্জস্য রেখে নতুন বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।
মাত্র ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কর দেবেন- এমন প্রশ্ন রেখে ড. ইফতেখার বলেন, “সাময়িকভাবে এমন সুযোগ থেকে সরকার কিছুটা রাজস্ব পেলেও ধীরে ধীরে তা বড় সংখ্যক করদাতাদের খেলাপি হতে উৎসাহিত করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতির মাত্রাকে বাড়িয়ে দেবে এবং কর খেলাপির নতুন এক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে।“
এতে আরও বলা হয়, “চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ হবার খবরে নীতনির্ধারক মহলে যে সন্তুষ্টির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের প্রতি একরকম উপহাসই বলা চলে।“