গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ‘রাজধানীতে নিয়ম না মেনে নির্মিত সব ভবন ভেঙে ফেলা হবে। অবৈধ স্থাপনা যদি কোনো মন্ত্রী-এমপির বাড়িও হয়, আমার নিজের কোনো আত্মীয়-স্বজনও হয়, ড্রপ হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।’
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চিহ্নিত এসব ভবন যদি কোনো ব্যক্তির আয়ের উৎস হয়, তা কোনোভাবেই মানুষের জীবনের চেয়ে বড় হতে পারে না। নতুন ঢাকায় যারা নিয়ম না মেনে বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন, তাদের একেবারে অনিয়মের বিল্ডিংগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। তবে যেসব ভবনে কিছু অনিয়ম হয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলাদা পিলার বা আলাদা ভিত্তি দিয়ে টিকেয়ে রাখা সম্ভব, সেগুলোকে ছাড় দেওয়া হলেও ঝুঁকি সৃষ্টি করে– এমন ভবন ছাড় পাবে না।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর রাজউকের ২৪টি দলে কাজ করে এক হাজার ৮১৮টি বাড়িতে (বহুতল ভবন) অনিয়ম পেয়েছে জানিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এসব বাড়ির অনেক মালিক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি– ক্ষমতায়, রাজনীতিতে, অর্থে। তাদের সম্পর্কে রিপোর্ট করা হবে– অনেকেই ভাবেননি, কারণ তারা এত পাওয়ারফুল।
এসব বিল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে রাজউককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজউককে বলেছি– একটা বাড়িও ড্রপ হবে না। যদি কোনো মন্ত্রী-এমপির বাড়িও হয়, আমার নিজের কোনো আত্মীয়-স্বজনও হয়, ড্রপ হবে না। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ঢাকার অন্য ভবনগুলোর বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। একটি বাড়িকেও আইনের বাইরে রাখা হবে না।
পুরান ঢাকায় পাঁচশ’ বছরের বেশি পুরনো ভবন থাকার তথ্য দিয়ে পূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘ওই ভবন চাইলেই ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে ওই ভবনকে পরিবেশসম্মত ও ঝুঁকিহীন অবস্থায় নিতে আমরা নতুন করে ডেভেলপমেন্টের জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে প্রস্তাব করেছি।’
অনিয়মের খবর কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার তদন্ত করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নিউজের ওপর ভর করেই ১২টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিনি এ সময় মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মন্ত্রণালয় এবং আওতাভুক্ত সংস্থায় শীর্ষ কর্মীকর্তাদের বদলির একটি উদাহরণও তুলে ধরেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘গণপূর্তের একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, সে নাকি এত প্রভাবশালী যে তাকে ছোঁয়া কারও পক্ষে সম্ভব না। শুনলাম সে নাকি সমিতি করে, আমার দল করে, সাংঘাতিক পাওয়ারফুল অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। অপরাধের খতিয়ান খুঁজলাম, দেখলাম সে সাংঘাতিক বেপরোয়া। কিন্ত যখন তার বদলির জন্য উদ্যেগ নিলাম, তখন সে তদবির করালো বড় বড় জায়গা থেকে। ভাবলাম, এত তদবির যখন, তখন তার বিরুদ্ধে আন্তরিক হওয়া উচিত। এ জন্য তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পোস্টিং দিয়েছি। তবুও কোনো তদবির তাকে ঠেকাতে পারেনি। কারণ আমি নিজে একটা ওয়াদা করেছি– উপরে আল্লাহ, নিচে শেখ হাসিনা। মাঝখানে আমার কোনো তদবির নেই।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন।