অযোধ্যা মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে সংবাদ ছেপেছে প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই। আদালতের এ রায়কে হিন্দুদের পক্ষ সমর্থন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য এক ‘বড় জয়’ হিসাবেই তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যমগুলো।
‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট, ‘দ্য গার্ডিয়ান’- এর মতো অধিকাংশ পত্রিকাই একই সুরে কথা বলেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো এ রায়ের ফলে হিন্দু-মুসলিম সংঘাত আরও বাড়বে বলেও মত প্রকাশ করেছে।
কয়েক দশকের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে করা ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় শনিবার দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
রায়ে বলা হয়েছে, বিতর্কিত পৌনে ৩ একরের ওই ভূমিতে মন্দির হবে, তবে তা হবে একটি ট্রাস্টের অধীনে। আর মুসলিমদের জন্য মসজিদ তৈরি করতে কাছাকাছি অন্য স্থানে ৫ একর জমি দিতে হবে সরকারকে।
বিশ্বের অধিকাংশ সংবাদপত্র এ রায়ের খবর প্রথম পাতায়ই দিয়েছে। তারা বলছে, মোদীর এ জয় তার হাতকে আরও শক্তিশালী করবে।
‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ লিখেছে, “অযোধ্যায় কয়েক শতাব্দীর বিতর্কিত জমি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হিন্দুদের পক্ষে রায় দিয়েছে।” আর্টিকেলটির লেখক এ রায়কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য বড় ধরনের জয় উল্লেখ করে লিখেছেন,“ মোদী ও তার অনুসারীরা ভারতকে নতুন করে ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে সরিয়ে হিন্দুত্বের পথে এগিয়ে নেওয়ার যে চেষ্টা করছেন, তার পক্ষে এটি বড় জয়।”
দ্য ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ লিখেছে, “মুসলিমদের অভিযোগ থাকার পরও বিতর্কিত জমি হিন্দুদের পুরস্কার দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য এটি অনেক বড় জয়।” হিন্দু জাতীয়বাদীরা এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দীর্ঘদিন ধরেই অযোধ্যায় রামের মন্দির তৈরির চেষ্টা করে আসছে উল্লেখ করে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ তাদের প্রতিবেদনে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসাবে উল্লেখ করেছে এবং এটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ নয়’ বলে মন্তব্য করেছে।
‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকাও লিখেছে, “অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য ‘বিশাল জয়’।” মোদী ভারতের নির্বাচনে জয়লাভের মাত্র ছয়মাস পরই সুপ্রিম কোর্টের এ রায় তাকে আরেকটি বড় জয় এনে দিয়েছে উল্লেখ করে পত্রিকাটি লিখেছে, “মোদী ও তার বিজেপি সরকারের হিন্দু জাতীয়তাবাদী কর্মসূচির মূল মনোযোগের বিষয়টিই ছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির ফের নির্মাণ করা।”
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে রায় হওয়ার সময়কার পরিস্থিতি বর্ণনায় তাদের সংবাদদাতারা বলেছেন, রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতকক্ষের বাইরে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। হিন্দুরা এ রায়কে খুবই ভারসাম্যপূর্ণ বলেছে এবং মুসলিমরা সন্তুষ্ট হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। রায় নিয়ে হিন্দু-মুসলিম এ বিভক্তির ইঙ্গিত দিয়ে আগামী দিনগুলোতে ভারত যেন সম্প্রীতির পথেই থাকে এমন আশা প্রকাশ করেছে বিবিসি।
ওদিকে, সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হিন্দুদেরকেই বিতর্কিত জায়গায় মন্দির নির্মাণ করতে দেওয়া হয়েছে। যে জায়গা হিন্দু-মুসলিম উভয়ই দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে এসেছে এবং ১৯৯২ সালে যেখানে থাকা মসজিদ উগ্র হিন্দুরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে- সেখানেই আদালত রামমন্দির নির্মাণ করতে দিল। আর মুসলিমদেরকে এর বদলে অন্য জায়গায় বিকল্প ৫ একর জমি দিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের দৈনিকগুলোতে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির রায় নিয়ে প্রতিবেদনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জয় এর চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক। পাকিস্তানের ‘দ্য ডন’ পত্রিকা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের রায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।’
ওদিকে, পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার পত্রিকা ‘দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ অযোধ্যার রায় ‘হিন্দুদের পক্ষে গেছে বলে মন্তব্য করেছে এবং এ রায়কে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জয়’ বলেই উল্লেখ করেছে।