অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায়: বাণিজ্যমন্ত্রী

cip-5d82575a8ef1e

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা বলেছিলেন। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই করে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় সেই লড়াই সফল হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।

বুধবার ২০১৭ সালে রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘সিআইপি কার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ১৭ খাতের ১৩৬ ব্যবসায়ীকে সিআইপি (রফতানি) কার্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র ওই সময়ের পরিচালনা পর্ষদের ৪৬ জনকে সিআইপি (ট্রেড) কার্ড দেওয়া হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী এসব ব্যক্তির হাতে কার্ড তুলে দেন।

যেসব ব্যবসায়ী সিআইপি কার্ড পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- স্কয়ার ফ্যাশনসের এমডি তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআই’র বর্তমান সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, আকিজ গ্রুপের শেখ নাসির উদ্দিন, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, শারমিন গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

টিপু মুনশি বলেন, রফতানি অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে গতিশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। দেশের আজকের এ অবস্থানের পেছনে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০২১ সালে রফতানি খাত থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, আমার স্থির বিশ্বাস- ব্যবসায়ীরা তা অর্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। আগামীতে সিআইপির সংখ্যা বাড়ানো এবং সিআইপি নির্বাচনে আরও বেশি খাত সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে পাট, চা ও চামড়া রফতানি হতো। আর আয় ছিল সামান্য। তখন দেশে ১০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হতো, যার আট মিলিয়ন কেজিই রফতানি হতো। এখন চা আমদানি হয়। কারণ, ওই সময়ে চা খাওয়ার লোক ছিল না। এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ১৬ কোটি মানুষই চা খায়। এখন ৪৬ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হচ্ছে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, তবে ব্যবসায়ীদের এটাও মনে রাখতে হবে, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে যেসব সুবিধা আছে, তার অনেক সুবিধাই থাকবে না। এ জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন পণ্য ও বাজার সৃষ্টি করতে হবে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ভেনেজুয়েলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলা একসময় সমৃদ্ধ দেশ ছিল। দেশটির রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি আসত জ্বালানি তেল রফতানি করে। কিন্তু আরব বসন্তের পর তেলের দাম কমে যায়। ফলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলার মূল্যস্ফীতি ব্যাপক। সমৃদ্ধ দেশ এখন দুর্ভিক্ষের পথে যাচ্ছে। এটাকে বলা হয় ‘ডাচ ডিজিস’। কোনো দেশের রফতানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি যদি একটি খাত থেকে আসে এবং ব্যাংকিং খাত অব্যবস্থাপনায় পড়ে, তাহলে তাকে ডাচ ডিজিস বলা হয়। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ জরুরি।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দক্ষতা উন্নয়ন এখন জরুরি। এ জন্য এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মূল উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, সম্ভাবনাও আছে। চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় বাজার। তবে নতুন বাজারের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।

সিআইপিপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে এনভয় গ্রুপের এমডি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, দেশে বিভিন্ন খাতে উন্নতি অনেক হচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট নয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে নিজেদের কার্যক্রমে আরও গতিশীল হতে হবে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

সিআইপিপ্রাপ্ত প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। এ জন্য সরকারকে কারখানার উৎপাদন খরচ কমানো, অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, দক্ষ জনবল সৃষ্টি, পণ্যের মানোন্নয়ন ও নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।

Pin It