প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের মতো রপ্তানি আয়েও সুখবর নিয়ে শুরু হল নতুন অর্থবছর।
অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুরুটা ভালোই হয়েছে। তবে এক মাসের তথ্য দিয়ে মূল্যায়ন করা কঠিন। আরও দু-এক মাস গেলে বোঝা যাবে নতুন বছরটা কেমন যাবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার রপ্তানি আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৮৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩৩১ কোটি ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
এই আয় গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।
জুলাই মাসে উভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ; আয় হয়েছে ১৬৭ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
এই মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৩২১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩ হাজার ৮২০ কোটি (৩৮.২০ বিলিয়ন) ডলার।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে পোশাক খাত থেকে এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ (৩৪.১৩ বিলিয়ন) ডলার।
গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।
অর্থবছরের প্রথম মাসের রপ্তানি আয়ের তথ্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় শুরুটা ভালোই হয়েছে। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে যুদ্ধরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তা আমাদের তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
“এই যুদ্ধে আমরা যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে উল্টো আমেরিকার বাজারে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পারি সে সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারি-বেসরকারি খাত মিলে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।”
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অংক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন,
এক মাসের তথ্য দিয়ে রপ্তানি আয়ের গতি-প্রকৃতি বোঝা মুশকিল। তবে এটা বলা যায়, শুরুটা ভালোই হয়েছে।
“গত অর্থবছরে রেমিটেন্সের পাশপাশি রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতিও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। আমদানি বাড়ার পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েনি।”
‘তবে তৈরি পোশাকের উপর নির্ভর করে এই আয় মোটেই ভালো নয়’ মন্তব্য করে জায়েদ বখত বলেন, “অনেক দিন ধরেই আমরা রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের কথা বলছি…।কিন্তু খুব বেশি কাজ হচ্ছে না। এই দিকে আমাদের এখন বেশি নজর দিতে হবে।”
চামড়াজাত পণ্য
কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে সারা দেশে সংকট চললেও জুলাই মাসে চামড়া ও চামজাতপণ্য রপ্তানি আশার আলো জাগিয়েছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ১০ কোটি ৬১ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি হয়েছে ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জুলাই মাসে ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারের চামড়া, ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য এবং ৭ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে।
পাট পণ্য
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে।তারমধ্যে ৬৫ লাখ ডলারের কাঁচা পাট, ৫ কোটি ডলারের পাটের সুতা এবং ৮৩ লাখ ডলারের পাটের বস্তা রপ্তানি হয়েছে।
সব মিলিয়ে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৮৩ শতাংশ।
ওষুধ
জুলাই মাসে ওষুধ রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে ১ কোটি ১৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাই মাসে আয় হয়েছিল ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
জুলাই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ। এই মাসে ১৬০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা।
গত অর্থবছরে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।