ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাতে বিস্ময়, হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শনিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, চলতি বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার যে অনৈতিক সুযোগ রাখা হয়েছিলো, প্রস্তাবিত বাজেটে সেটি না বাড়ানোয় করদাতাদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি মিলেছিলো।
কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে তা উত্কণ্ঠায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী ‘এক মাস দেখে সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। টিআইবি আশা করে, অর্থমন্ত্রী এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন এবং ৩০ জুনের পর দুর্নীতি সহায়ক, বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক সুবিধাটি আর না বাড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের একটি কঠোর বার্তা দেবেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করা নিয়ে কোনো ঘোষণা না থাকাকে আমরা সরকারের বোধোদয় হয়েছে মনে করেছিলাম এবং সতর্ক সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, বাজেট অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দিকনির্দেশনায় তৈরি একটি সমন্বিত চিন্তার আর্থিক দলিল। কিন্তু সেটি সংসদে উপস্থাপনের পরদিনই তারই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সংশয় এবং বাস্তবে ইউ-টার্ন সত্যিই অবাক করার মতো। তার চেয়েও হতাশার বিষয় হচ্ছে ন্যায় ও ন্যায্যতার নিরিখে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চলতি অর্থবছরের পর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাজেটোত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বললেও কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় বা চাপে তাতে অটল থাকতে পারছেন না? তা পরিষ্কার করতে পারেননি।
ইতিপূর্বে ‘যতদিন অপ্রদর্শিত আয়, ততদিন ঘোষণার সুযোগ’ মর্মে দেওয়া বক্তব্য তথ্য উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত ছিলো না বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা হাজির করেছেন সেটি তার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে সত্যিই আশাপ্রদ নয়। ড. জামান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেকর্ড ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ বৈধ করার ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু থেকেই ছিলো, শঙ্কা হচ্ছে তিনি অন্যায় এই সুবিধার পক্ষে সেই ঢালটি এখন ব্যবহার করতে চাইছেন যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
অথচ এর মাধ্যমে সত্যিকারভাবে সরকার কতোটা রাজস্ব ক্ষতির স্বীকার হলো সেটি কোনোভাবেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। যেটিকে সৎ ও বৈধ পন্থায় উপার্জনকারী করদাতাদের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় খেলাপির সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের পাঁয়তারা বলে মনে করা মোটেই বাহুল্য হবে না।
ড. জামান বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের আইনি মারপ্যাঁচে থাকা অপ্রদর্শিত আয়ের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার অন্যান্য সুযোগ বাতিল করার এখনই সময়। অপ্রদর্শিত অর্থ আর কালো টাকার মধ্যে পার্থক্য যে অতীব ক্ষীণ তা কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়. কোনো-না-কোনো কৌশলে দুর্নীতিবাজদের তোষণের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সরকার দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা।