অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯২ম আসরে এসে দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা প্যারাসাইট গড়ল ইতিহাস; এই প্রথম ইংরেজির বাইরে অন্য কোনো ভাষার সিনেমা পেল সেরা চলচ্চিত্রের অস্কার।
কেবল সেরা চলচ্চিত্র নয়, রোববার অস্কারের সেরা নির্মাতার পুরস্কারও পেয়েছেন প্যারাসাইটের পরিচালক বং জুন হো। সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম এবং মৌলিক চিত্রনাট্যের দুটো অস্কারও গেছে প্যারাসাইটের দখলে।
এবার অস্কারের শুরু থেকেই আলোচনায় থাকা টড ফিলিপসের সিনেমা জোকার সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিততে না পারলেও মূল ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন হোয়াকিন ফিনিক্স।
মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে মার্কিন অভিনেত্রী-গায়িকা জুডি গারল্যান্ডের রূপ ধরে জুডি সিনেমায় পর্দায় ফেরা রেনে জেলভেগার জিতে নিয়েছেন এবারের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।
বরাবরের মতেই লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে বসে অস্কার রজনীর এই জমকালো আসর। গতবারের মত এবারের আসরেও কোনো হোস্ট ছিল না। তার বদলে রোববারের আসর পেয়েছে ‘ডাবল হোস্ট’।
জেনেলি মোনার পারফরমেন্সের পর সাবেক দুই হোস্ট স্টিভ মার্টিন এবং ক্রিস রক মঞ্চে আসেন পুরস্কার বিতরণী সূচনার চিরাচরিত মনোলগ আওড়াতে। এরপর একে একে অন্য সেলিব্রেটিরা এসে বিভিন্ন বিভাগের বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন পুরস্কার।
‘পরজীবী’
প্যারাসাইট সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে সিউলের দরিদ্র কিম পরিবারের চার সদস্যকে ঘিরে, যারা পরিচয় গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাজ নেয় এক ধনী পরিবারে। আর নির্মাতা বং জুন হো ব্ল্যাক কমেডির ছাঁচে ফেলে বলে যান শ্রেণি বৈষম্যের পল্প।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই ‘পরজীবীদের’ গল্পই গেলবছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে সোনালী পাম জিতে নেয়। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যান্য আসরেও পায় দারুণ প্রশংসা।
ফলে অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম (আগে এ বিভাগের পুরস্কারের নাম ছিল বিদেশি ভাষার সেরা চলচ্চিত্র) ক্যাটাগরিতে প্যারাসাইটের পুরস্কার জয় অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল।
কিন্তু মার্টিন স্করসেজি, টড ফিলিপস, স্যাম মেন্ডিস, কুয়েন্টিন টারান্টিনোর মত বাঘা বাঘা নির্মাতাদের পেছনে ফেলে সেরা পরিচালকের অস্কার যখন প্যারাসাইটের বং জুন হো’র হাতে উঠল, বিবিসি একে লিখল অস্কার রজনীর ‘বড় অঘটন’।
আর বং জুন হো বললেন, “সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্মের পুরস্কারটা পাওয়ার পর ভেবেছিলাম আজ রাতের মত বোধ হয় আমার কাজ শেষ, এখন আমি রিল্যাক্স করতে পারি।… এখন মনে হচ্ছে আমি কাল সকাল পর্যন্ত পান করব।”
তবে রেনে জেলভেগার সেরা অভিনেত্রী এবং হোয়াকিন ফিনিক্স সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিয়ে যাওয়ার পর আবারও সদলবলে মঞ্চে আসতে হল দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বং জুন হো’কে। কারণ তাদের ‘প্যারাসাইট’ যে এবারের অস্কারে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে!
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল স্যার স্যাম মেন্ডিসের ১৯১৭। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিনেমাটি এবার টেকনিক্যাল ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার পেলেও বড় কোনো অস্কার জিততে পারেনি।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা প্যারাসাইট সেই কাজটিই করল যা আর কোনো ‘সাবটাইটেলওয়ালা ফিল্ম’ অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯২ বছরের ইতিহাসে করতে পারেনি।
বং জুন হো এবার বললেন, “আমার মনে হচ্ছে, ঘুম ভেঙে গেলে হয়ত দেখব এটা আসলে স্বপ্ন ছিল। সব কিছু খুব অদ্ভুত লাগছে।”
আর অস্কার হাতে নিয়ে সিনেমার প্রযোজক কোয়াক সিন-আয়ে বললেন, “আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা কখনও ভাবিনি যে এটা ঘটতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, ইতিহসের খুবই সৌভাগ্যের একটি মুহূর্ত এটা।”
এক নজরে ৯২তম অস্কার
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: প্যারাসাইট
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা: হোয়াকিন ফিনিক্স (জোকার)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী: রেনে জেলভেগার (জুডি)
শ্রেষ্ঠ পরিচালক: বং জুন হো (প্যারাসাইট)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা: ব্র্যাড পিট (ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী : লরা ডার্ন (ম্যারেজ স্টোরি)
চিত্রনাট্য (মৌলিক): প্যারাসাইট
চিত্রনাট্য (অ্যাডপটেড): জো জো র্যাবিট
বিদেশি ভাষার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: প্যারাসাইট
পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: আমেরিকান ফ্যাক্টরি
পূর্ণদৈর্ঘ্য এনিমেটেড চলচ্চিত্র: টয় স্টোরি ৪
সিনেমাটোগ্রাফি: রজার ডিকিনস (১৯১৭)