রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আইনজীবীরা হলো সমাজের অগ্রসর অংশ। ব্রিটিশ আমল থেকে আইনজীবীরাই সমাজের নানা কাজে নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু বর্তমানে আইনজীবীরা কেন জানি পিছিয়ে পড়ছেন। জাতীয় সংসদে সব সময় আইনজীবীদের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দিন দিন জাতীয় সংসদে আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব কমে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভা ও ১০ তলাবিশিষ্ট আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সাবেক জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচবারের নির্বাচিত সভাপতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আইনজীবীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরও বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের সাতটি সংসদীয় আসনের নির্বাচিত ছয়জনই ছিলেন আইনজীবী। পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় অধিকাংশ আসনে আইনজীবীরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার মাত্র একজন আইনজীবী আছেন। তিনি আরও বলেন, আগে কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আইনজীবীরা নির্বাচিত হতেন। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আইনজীবীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি স্পিকার থাকা অবস্থায় ৩৪০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ৩৩ জন ছিলেন আইনজীবী। দীর্ঘদিন আইন পেশায় থাকায় আইনজীবীদের অবস্থান খাটো হলে বিষয়টি ভাবনায় ফেলে দেয়।
তিনি দুঃখ করে বলেন, আইন পেশায় কখনও বাড়তি টাকা নিইনি। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা খুবই দুঃখজনক। কারণ, আমি আসতে না পারলেও সব খবর আমার কাছে চলে যায়। তিনি বলেন, উকিলদের স্থানীয় কল্যাণ তহবিলের জন্য ওকালতনামার দাম ২৭০ টাকা নেওয়া হয়। একজন গরিব মানুষের জন্য ২৭০ টাকায় ওকালতনামা কেনা কঠিন। গরিবের গলা কাটবেন না। রাষ্ট্রপতি নরসুন্দা নদীর দুর্দশার কথা উল্লেখ করে আক্ষেপ করেন।
কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, জেলা জজ সায়েদুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক সহিদুল আলম সহীদ, এহতেশামুল হক জুয়েল, নাজমুন নাহার মিলি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আইনজীবী সমিতি ও স্থানীয় বিচারকদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে ক্রেস্ট ও মানপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ূয়া, প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পিপি শাহ আজিজুল হক, জিপি বিজয় শঙ্কর রায়, স্পেশাল পিপি এম এ আফজল, জেলা বারের সদস্যসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তারা।
পরে রাষ্ট্রপতি শহরের শ্যামসুন্দর আখড়া পরিদর্শন করে সেখানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।