জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)’ সংশোধনীর প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ৩ মাস ১৫ দিনেও অগ্রগতি জানতে না পেরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার তৃতীয় দফায় চিঠি দিয়ে এ প্রতিক্রিয়া জানায়।
ওই চিঠিতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে আইন মন্ত্রণালয়কে আলটিমেটামও দিয়েছে কমিশন। এটি শেষবারের মতো অনুরোধ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরাও তো অনন্তকাল ধরে একটা ম্যাটার পারস্যু করতে পারব না। এ জন্য আমরা বিষয়টা শেষ করে দিতে চাই। যদি আর কোনো রেসপন্স না হয়, আমরা অন্য কাজে কনসেনট্রেট (মনোনিবেশ) করব। এ বিষয়টা নিয়ে হয়তো আমাদের আর পারস্যু করতে হবে না। ১৫ ডিসেম্বরের পর এ বিষয়ে কমিশন বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিওতে বেশকিছু সংশোধনী এনে একটি প্রস্তাব ৮ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। ওই প্রস্তাবের অগ্রগতি জানতে না পেরে রোববার আইন মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় দফায় চিঠি দেয় কমিশন। ওই চিঠির অনুলিপি রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ কে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধানমতে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। আইন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্র ও সরকারের নির্বাহী বিভাগের একাংশ। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।
এতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন মনে করে, সংবিধান ও আইনের সুস্পষ্ট বিধানের ব্যত্যয়ে যাচিত অনুরোধ ও চাহিদা উপেক্ষিত হলে কমিশন স্বীয় দায়িত্ব পালনে আবশ্যক সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। এতে নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নে জনমনে অনাকাঙ্ক্ষিত সংশয়ের উদ্রেক হতে পারে।
এর আগেও দুই দফায় চিঠি দিয়েও সাড়া না পাওয়ার বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, কিছু সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভ‚ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরপিও সংশোধনসংক্রান্ত বিল প্রস্তুত করে ৮ আগস্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে খসড়া বিলটি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২৮ সেপ্টেম্বর ও ১০ অক্টোবর দুদফা চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। চিঠিতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিকে অবগত করতে শেষবারের মতো অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে সিইসি আরও বলেন, যেহেতু সময় বেঁধে দিয়েছি, আমাদের প্রত্যাশা, ওই সময়ের মধ্যেই তারা রেসপন্স নিশ্চয়ই করবে। সরকারের বিভিন্ন ব্যস্ততা থাকে। ব্যস্ততার কারণে তারা সময় করে উঠতে পারেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যুক্তি থাকতে পারে যে এই সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। আইন প্রণয়ন কর্তৃপক্ষ সরকার ও সংসদ। তারা যদি মনে করে আইন পর্যাপ্ত আছে, এ বিষয়ে করণীয় নেই, সেটা ইসিকে জানিয়ে দিলে ইসি বিবেচনা করত।
ইসি সূত্র জানায়, বিদ্যমান আরপিওতে যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোট বাতিলে ইসির ক্ষমতা ও ভোট বন্ধে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়ানো, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির বিধান, সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে শাস্তি, দলের সর্বস্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া, দায়িত্বে অবহেলায় কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতা বাড়ানো, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ভোটগণনার বিবরণী প্রার্থী ও তার এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি) পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব ইত্যাদি।
আগস্টে এসব প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর ৪ অক্টোবর ইভিএম-সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোট ভোটারের সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার অনুমতি (কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে) দিতে পারবেন।