ঢাকা সিটি নির্বাচনকে শতাব্দির ‘সেরা’ বলাকে পাগলের প্রলাপ বলেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
গত শনিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে সোমবার ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশে একথা বলেন তিনি।
সেলিম বলেন, “পাগল হয়ে গেছে সরকারের নেতারা। নিজেদের যুক্তির তাৎপর্যও তারা সেভাবে বুঝতে পারে না।”
সিটি নির্বাচনে অনিয়মের নানা অভিযোগের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, “একশ বছরের মধ্যে এত ভালো নির্বাচন হয়নি।”
এ মন্তব্যের জন্য সরকারি দলের এই নেতাকে কারাগারে পাঠানোর দাবি জানান বাম নেতা সেলিম।
“হানিফ সাহেবকে ইমিডিয়েটলি অ্যারেস্ট করা উচিৎ। কারণ উনার কথার অর্থ দাঁড়ায়, একশ বছরের ভেতরে ১৯৭০ সালের ইলেকশন এবারের ইলেকশনের চেয়ে খারাপ ছিল!
“বঙ্গবন্ধু যে নির্বাচনে জয়লাভ করে, যে যুক্তিতে অস্ত্র ধরে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম,সে নির্বাচনেও এবারের ভোট চুরির নির্বাচনের চেয়ে খারাপ ছিল, এ কথাই কিন্তু হানিফ সাহেব বলার চেষ্টা করেছেন। এরপরে আমি যদি গ্রেপ্তারের দাবি না করি, তাহলে পরে মুজিববর্ষে নিশ্চয়ই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অপমান করা হবে।”
‘দেশ উন্নত হচ্ছে বলেই ভোটকেন্দ্রে ভোটার কম’-এই মন্তব্যের জন্য ঢাকা উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামেরও সমালোচনা করেন সিপিবি সভাপতি।
“তার মানে উনি বলতে চাচ্ছেন, আমাদের দেশ উন্নতি করার প্রমাণ হল সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়, সেদিন দেখা যাবে, ভোটারের সংখ্যা শূন্য শতাংশ হয়ে যাবে, তখনই তিনি দাবি করবেন, আমাদের দেশ সবচেয়ে উন্নত হয়েছে।”
‘জনগণ আরামে আছে বলে ভোটের দিকে নজর নেই’- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেলিম বলেন, “এসব কথা বলে মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে কোনোভাবে আমাদের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, এবারের নির্বাচন না জিতলে আওয়ামী লীগের ‘খবর’ আছে।
তা স্মরণ করে সেলিম বলেন, “এ কথার অর্থ কী? ক্ষমতায় না থাকতে পারলে লুটপাট করতে পারবে না, ক্ষমতায় না থাকতে পারলে সবাইকে কোর্টের সামনে ১৫ বছর, ২০ বছর, কত বছর জেল খাটতে হয়, কেউ সেটা বলতে পারে না।
“সুতরাং শাস্তির ভয় থেকে বাঁচার জন্য, এবং লুটপাটের জন্য যেনতেনভবে সে ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা অস্থির হয়ে গেছে।”
সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আনেন সিপিবি সভাপতি।
“বেশি ভোটার যাতে আসতে না পারে সেটার ব্যাপারে আগে থেকে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। এবার ভোটাধিকারকে হরণ করে মাটি চাপা দিয়ে তার কবর রচনা করে দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভোটাধিকার হরণকারী’ আখ্যায়িত করে সেলিম বলেন, “মানুষের ভোটাধিকারের উপর হাত দিলে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না।”
জনগণের ভোটাধিকার এভাবে হরণ করা হলে সামনে বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জনগণের হাত থেকে যদি প্রজাতন্ত্রের মালিকানা সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে তা হয়ে যাবে বেওয়ারিশ। বেওয়ারিশ দেশের সম্পদ নিয়ে যে যেভাবে পারে লুটপাট চালাতে থাকবে। ”
ঢাকা উত্তরে সিপিবির মেয়রপ্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল সমাবেশে বলেন, “ভোটের দিনে আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন্দ্রের সামনে কৃত্রিম সংঘাত তৈরি করেছিল, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে না পারেন। ”
নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততায় ভোটে অংশ নিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর যথেষ্ট অনাস্থা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহসান হাবিব লাভলু, কেন্দ্রীয় নেতা লুনা নূর এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।