আগুনে পুড়ল নতর-দাম ক্যাথেড্রাল

সারাবিশ্বের পর্যটকরা প্যারিস ভ্রমণের সময় যে ক’টি স্থাপনার দিকে বিশেষ নজর রাখেন, সেই নতর-দাম ক্যাথেড্রাল পুড়ল আগুনে।

Notre-Dame-2

ফ্রান্সের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলের এই ‘আইকনিক’ স্থাপনায় সোমবার বিকালে আকস্মিকভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়ে আটশ বছর পুরনো এই গির্জা ভবনে আগুন এবং ধোঁয়া ওড়ার ছবি ও ভিডিও সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।

কিভাবে আগুন লাগল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভবন সংস্কারের সময় কোনো গোলযোগ থেকে এই আগুনের সূত্রপাত বলে ফরাসি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে।

এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তারা।

Embedded videoইয়াসেক পোলতারাক নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, “পুরো ছাদই ধসে পড়েছে, বলা যায়, এই ভবনের আর কোনো আশা নেই।”

‘সব কিছুই ধসে পড়ছে,” পুরো ছাদ আগুনে পুড়তে দেখে বলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

গুগল মানচিত্রে প্যারিসে নতর-দাম ক্যাথেড্রালের অবস্থানগুগল মানচিত্রে প্যারিসে নতর-দাম ক্যাথেড্রালের অবস্থান

অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভাতে ইতোমধ্যে কাজে নেমে পড়েছেন। তাদের কাজে কোনো ধরনের বিঘ্ন যেন না ঘটে, সে দিকে দৃষ্টি রাখতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছেন প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো।

তিনি একে ‘ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, অগ্নি নির্বাপক বাহিনী ভবনটি ঘিরে যে সতর্কতামূলক বেষ্টনি তৈরি করেছেন, নাগরিকরা যেন নিরাপত্তার স্বার্থে তার বাইরে অবস্থান করেন।

কর্মকর্তারা বলেছেন, প্যারিসের কেন্দ্রস্থলের সেইন নদীর মধ্যকার দ্বীপের এই গির্জার আশপাশের ভবনগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে খালি করে ফেলা হয়েছে।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার জাতির উদ্দেশে ভাষণ স্থগিত করেছেন বলে এলিজে প্রসাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স ফ্রান্সের এই নতর-দাম ক্যাথিড্রালে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বনেতাদের মধ্যেও; নানা পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প আগুন নেভাতে ‘ফ্লাইং ওয়াটার ট্যাংকার’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে শুরু হয়েছিল নতর-দাম ক্যাথেড্রালের নির্মাণ, একশ বছর লেগেছিল এই কাজ শেষ করতে। তারপর কয়েকবার এর সংস্কার হয়েছিল।

ফরাসি বিপ্লবের সময় এই ক্যাথেড্রাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দীন-হীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভিক্তর উগোর জগদ্বিখ্যাত উপন্যাস হ্যাঞ্চব্যাক অফ নতরদাম বা নতরদামের কুঁজো প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই নতুন করে আবিষ্কার করে এই গির্জাকে।

এরপর এটি সংস্কারে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৮৪৫ সালে, ২৫ বছর কাজের পর পুনরায় দৃষ্টিনন্দন অবস্থায় ফেরে ইউরোপে মধ্যযুগের শেষার্ধ্বের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনা।

যেমন ছিল নতর-দাম ক্যাথেড্রাল- ছবি: রয়টার্সতবে কয়েক বছর আগে ভবনের বিভিন্ন অংশের পাথরে ফাটল ধরায় এটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়।

গত বছর ফ্রান্সের কাথলিক চার্চগুলো নতর-দাম ক্যাথেড্রাল রক্ষায় তহবিল যোগাতে ফ্রান্সের সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

যার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় সংস্কার কাজ, সেই সংস্কার কাজই ভবনটি বিলীন করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখল বলে এখন মনে করা হচ্ছে।

Pin It