বিশ্বকাপের ধ্বনি বেজে গেছে। প্রতিপক্ষ নিয়ে এখন চলছে কাটাছেড়া। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর সম্ভাবনা, প্রত্যাশা নিয়ে বেরুচ্ছে খবর। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও কথা বললেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে। কথা বললেন তার চোখে দলের খামতি নিয়েও। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ব্যাঙ্গালুরু মিররকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারের মূল অংশ তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের প্রত্যাশা কি?
বাশার: এই দল ২০০৭ এর চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। আমরা নিউজিল্যান্ডে সিরিজ হেরেছি। শেষ দুই বছরে প্রত্যাশা মতো ফল পায়নি। তবে বিশ্বকাপের আগে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এটা ধরে রাখতে পারলে ২০০৭ কিংবা ২০১৫ বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো করবে আমাদের দল।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের ২০০৭ বিশ্বকাপের ওই দলে ভয়ডরহীন একটা ব্যাপার দেখা গিয়েছিল। তামিম, তখন হয়তো ১৮ বছর বয়সী হবেন। দারুণ শট খেলে ভক্তদের মন জয় করেছেন। সেই তামিম, সেই বাংলাদেশ এখন কি কিছুটা বদলে গেছে?
বাশার: ওই তামিম ছিল কাঁচা ক্রিকেটার। তারুণ্য দিয়ে ক্রিকেট খেলত তখন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন সে ১০ বছরের বেশি। এখন সেই কাঁচা তামিমকে তো আর দেখতে চাইলে হবে না। এখন সে যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী। অনেক বেশি পরিণত। বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধরে রাখে সে।
অবশ্যই তামিম এখনও ভয়ডরহীন ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডে বড় রান পেতে হলে তামিমকেই এগিয়ে আসতে হবে। সেই দলের মূল ব্যাটসম্যান। সঙ্গে আছে সৌম্য। সে ভয়ডরহীন ব্যাটিং করে। লিটন দাসও প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। শট খেলতে পছন্দ করে সেও। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ ভালো করতে পারলে আমাদের ব্যাটিং নিয়ে অন্যদের চিন্তা করতেই হবে। পরিষ্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলবো আমরা।
প্রশ্ন: নিদাহাস ট্রফি, এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মানসিক বাধায় জিততে পারেনি। বিশ্বকাপেও কি এটা বড় চিন্তার জায়গা?
বাশার: এটা নিয়ে দলের মধ্যেও আমরা আলাপ করেছি। ভালো ক্রিকেট খেলেও আমরা শেষ ধাপ পেরুতে পারছি না। ভালো ব্যাপার হলো বিশ্বকাপের আগে আমরা একটা ফাইনাল জিতেছি। এখন আমাদের মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে হবে।
প্রশ্ন: সাকিব হায়দরাবাদের হয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি। তার আগে আঙুলের ইনজুরিতে ছিলেন। দলের সেরা ক্রিকেটারকে নিয়ে কি কোন চিন্তা আছে?
বাশার: সে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আমাদের সেরা ক্রিকেটার। বিশ্বকাপের আগে তার সঙ্গে কি হয়েছে তা আমি মোটেও ভাবছি না। সে বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। আয়ারল্যান্ডে সে ভালো করেছে। বিশ্বকাপেও সাকিব আমাদের দলের সেরা ক্রিকেটার।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের উইকেট নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। মিডল ওভারে বাংলাদেশের স্পিনাররা দলের রান আটকাতে পারবে?
বাশার: উইকেট আস্তে আস্তে শুষ্ক এবং স্লো হবে বলে আশা করছি। তবে বৃষ্টি হলে তা বদলে যাবে। আমার মনে হয়, দলগুলো কিভাবে আক্রমণ করবে সেটা তাই এখনও কন্ডিশন নির্ভর। আমরা যে ধরণের ক্রিকেট খেলি ইংল্যান্ডে সাফল্য পাওয়া কঠিন। তবে এবার কন্ডিশন আমাদের ম্যাচ হারিয়ে দেবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন: প্রত্যেক দেশেরই গতিময় পেসার আছে। বাংলাদেশে এখানে একটু ঘাটতি আছে। এটাকে কোন খামতি মনে করছেন?
বাশার: ধরে নিচ্ছি আমাদের জোরে বল করার মতো পেসার কম। তাসকিন ছিল কিন্তু ইনজুরির কারণে দলে ডাক পাননি। রুবেল আছে যে পেস দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতে পারে। এছাড়া আমাদের মাশরাফি এবং সাইফউদ্দিন আছেন। সাইফের বোলিং শুধু কাঁচা পেস নয়, তার বল ভালো মুভ করে। দলের যে পেস সামর্থ্য আছে তাই নিয়েই তাই লড়তে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল নিয়ে আপনি খুশি?
বাশার: দল নির্বাচন নিয়ে সবসময়ই দ্বিমত থাকবে। এটাই আমাদের সেরা ১৫। তাদের ওপর আমাদের ভরসা রাখতে হবে। হ্যা, একজন লেগ স্পিনার থাকলে ভালো হতো। আমি হয়তো দলে আরও একজন পেসার রাখতে পছন্দ করতাম। আমাকে এই দুই জায়গা একটু চিন্তায় ফেলছে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রত্যাশা কি? বাস্তবসম্মত উত্তর চায়।
বাশার: কঠিন প্রশ্ন। এই বিশ্বকাপের ফরম্যাট সবদলকেই পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছে। নক আউট পর্বে যেতে কমকরে পাঁচ-ছয়টি ম্যাচ জিততে হবে। ছন্দ হারা হয়ে না পড়লে, বাংলাদেশ সেমিতে খেলবে বলে মনে করছি। দলের লক্ষ্যও ওটাই।