ঢাকার গুলশানে বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়ি থেকে মদ ও ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধারের মামলায় তার ভাইপো ওমর মোহাম্মদ ভাইকে ২০ দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ওমরের খোঁজ পেলেই এ মামলার তদন্ত অনেকাংশে এগিয়ে নিতে পারবেন তারা।
গত ২৭ অক্টোবর গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৫৭ নম্বর সড়কের ১১/এ ও ১১/বি হোল্ডিংয়ে পাশাপাশি দুটি ছয় তলা বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মদ ও ক্যাসিনো সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের স্ত্রী নওরীন আজিজ, দুই বোন সখিনা মীর আলী, নুরজাহান হুদা ও প্রয়াত ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের সন্তানরা পরিবার নিয়ে ওই দুই ভবনে বসবাস করেন। তবে অভিযানের সময় নওরীন ও তার সন্তানরা বিদেশে ছিলেন।
দুই বাড়ি মিলিয়ে মোট ৩৯০ বোতল মদ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ওমর মোহাম্মদের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে ছিল আট বোতল; আর চতুর্থ তলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ফ্ল্যাটে বাকি বোতলগুলো পাওয়া যায়।
এছাড়া একটি ভবনের ছাদের এক কোণে ছিল ক্যাসিনো সামগ্রী ও সিসা বার। জুয়া খেলার রুলেট হুইল এবং ১৬ শ চিপস পাওয়া যায় সেখানে। ওই ছাদটি ব্যবহার করতেন ওমর মোহাম্মদ ভাই।
অভিযানের পর ওই বাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ক নবীন মণ্ডল ও মো. পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৮ অক্টোবর গুলশান থানায় দুটি মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, যাতে আসামি করা হয় তিনজনকে।
এর মধ্যে মদ উদ্ধারের মামলায় আসামি করা হয় ওই বাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ককে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. ইব্রাহীম এ মামলার তদন্ত করছেন।
আর ক্যাসিনো ও সিসা বার থেকে বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধারের ঘটনায় ওমরের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত করছেন পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান।
বিশ দিনে তদন্ত কতটা এগোলো জানতে চাইলে পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, “ওমর মোহাম্মদ ভাইয়ের খোঁজে অনেক জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু তাকে (ওমর) পাওয়া যায়নি।”
ওমরকে পাওয়া গেলেই এ মামলার তদন্ত অনেকাংশে এগোবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তখনই স্পষ্ট হবে এই ঘটনার সঙ্গে আর কে কে জড়িত রয়েছে।”
নবীন মণ্ডল আর পারভেজের কাজ থেকে কী তথ্য পাওয়া গেছে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহীম বলেন, “প্রথমে দুজনকে এক দিন করে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তখন তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে।
“পরে আবার তিন দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।”
তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের নিয়ে আবারও আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে জানান মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
নবীন ও পারভেজ এখন কারাগারে রয়েছেন জানিয়ে ইব্রাহীম বলেন, “ওমর মোহাম্মদ ভাইকে পাওয়া গেলে দুই মামলাই মীমাংসা করা সহজ হবে।”
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেই বেশি পরিচিত। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে তার নাম এসেছিল।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই অলিম্পিকের পাশাপাশি এমবি ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান; তার স্ত্রী নওরীন আজিজ ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
শেয়ার কেলেঙ্কারির এক মামলায় গত বছর আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছিল পুঁজিবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল। তার আগ থেকেই তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন।