চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তার মা সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বুকের ধনকে জীবিত ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই।’ এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।
এ সময় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজও উপস্থিত ছিলেন। সৌরভ তার মামাতো বোনের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ন্যায় ও সুবিচারের রাষ্ট্রে কোনো নাগরিকেরই এমন পরিণতি কাম্য নয়। আজ আমার ভাগ্নে, কাল হয়তো আপনার ভাই, আরেকদিন আপনার সন্তান হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সৈয়দা ইয়াসমিন আরজুমান। তিনি জানান, ২০১৭ সালে সৌরভ ‘বেঙ্গলি বিউটি’ নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যা দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়ায়। এ সময় সওদা নামে এক তরুণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা সংযুক্ত ছিলেন। একপর্যায়ে তরুণী জানান, তিনি ধার্মিক ও পর্দানশিন পরিবারের সদস্য। সম্পর্ক বহাল রাখতে হলে তাকে আপাতত টেলিফোনেই বিয়ে করতে হবে। কিন্তু সৌরভ এতে রাজি হননি। এরপর সওদার বাবা তাকে অন্য পাত্রের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এ জন্য সৌরভকে দায়ী করেন সওদার বাবা। তিনি সৌরভের পরিবারকেও হত্যার হুমকি দেন। নানাভাবে আইন-শৃগ্ধখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বা বাসায় গিয়ে সৌরভকে হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ জুন তাকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় ডেকে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সোহেল তাজ সাংবাদিকদের বলেন, অপহরণের এ ঘটনাত্রক্রম সিনেমাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা কীভাবে ঘটল, সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ন্যায়বিচার। আশা করব, কেউ যদি আইনবহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে, প্রধানমন্ত্রী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো মানুষের যেন এমন অবস্থা না হয়। এ রকম আশা করি না। আজ আমার ভাগ্নে, কাল হয়তো আপনার ভাই, আরেকদিন আপনার সন্তান হতে পারে। এটা কারও জন্যই কাম্য নয়। কার কী পরিচয় সেটা মুখ্য বিষয় নয়।’
সওদার পরিবার প্রভাবশালী কি-না? এমন প্রশেুর জবাবে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, তারা কাউকে ছোট কিংবা আঘাত করতে আসেননি। শুধু সৌরভকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের আগ্রহ থাকলে আপনারা খুঁজে বের করুন।’ তবে সৌরভের মা বলেন, সওদার বাবা সালেহ আজাদ চৌধুরী ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকায় থাকেন।
এর আগে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে সোহেল তাজ বলেছিলেন, এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটা তিনি জানেন। এর সূত্র ধরে অপহরণকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তাদের একটাই লক্ষ্য ছেলেটাকে ফিরে পাওয়া। তার প্রাণ বাঁচাতে হবে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খবরে এসেছে, সৌরভকে যে মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল করা হয়েছে, সেটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মকর্তার। তবে আমাদের পক্ষে তো কোনো কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যক্তিপর্যায়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কি-না? জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি সোহেল তাজ।