নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ছয় দিন আগে রীতিমত সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার পক্ষে নামার’ ঘোষণা দিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান।
তবে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম একবারও উচ্চারণ করেননি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য, যার সাথে রয়েছে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বৈরথ।
আগামী ১৬ জানুয়ারির ভোট সামনে রেখে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই চলছিল, তার মধ্যেই সোমবার দুপুরে চাষাড়ার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম।
তিনি বলেন, “এখানে আওয়ামী লীগের মূলধারার সবাই আছেন। আমি এতদিন নামি নাই। মানে, নামতে পারি নাই। আজকে থেকে নামলাম।”
একজন এমপি হয়ে সরাসরি নৌকায় ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধার কথা তুলে ধরে শামীম বলেন, ”অনেকে নৌকা নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এখানে অন্য কোনো খেলা খেলার চেষ্টা করবেন না।“
”এখানে কে প্রার্থী, হু কেয়ারস। কলাগাছ, না আমগাছ- সেটা দেখার বিষয় না। এটা বঙ্গবন্ধুর নৌকা। নৌকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এই আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এখন আমাদের জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। একে-অপরকে দোষারোপ করে ভোট হয় না। ভোট করতে হয় ভালবাসা দিয়ে।”
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে আইভী-শামীম দ্বন্দ্ব বহু দিনের। ২০১১ সালের নির্বাচনে শামীমকে হারিয়ে প্রথম মেয়র হন আইভী। এবারের নির্বাচনে আইভীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার; যিনি বিএনপির প্রতীক ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।
নির্বাচনের জমজমাট প্রচারের মধ্যে আইভী তার প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকারকে ‘ওসমান ভাইদের’ প্রার্থী হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। যদিও তৈমুর দাবি করেছিলেন, তিনি ‘জনগণের প্রার্থী’, কারো সঙ্গে তার ‘পারসোনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ নেই।
এই দুই প্রার্থীর এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর গত শনিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছিলেন, তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এর জবাব দেবেন।
দুদিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে শামীম ওসমান স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনি আপনার মত কথা বলতে থাকেন। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু হাতি দিয়া নৌকা ডুবাইবেন এই চিন্তা কইরেন না। এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আমার মনে হয় না, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ওই ক্ষমতা আছে যে নৌকাকে ডুবায়ে দেবে।”
”হাতি সাইজে বড় হতে পারে; আমরা হাতি কাঁধে নিয়ে দৌড় দেব, কিন্তু নৌকার উপরে হাতিরে উঠতে দিয়েন না”, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
নির্বাচনের প্রচার চলাকালে এভাবে সংবাদ সম্মেলনে আসার জন্য এই আইনপ্রণেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘ক্ষমা’ চান।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের পরিবেশ তুলে ধরে শামীম ওসমান প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচন এলে তিনিই কেন বারবার ‘সাবজেক্ট’ হন? ঠাট্টা করে বলেন, ”আমি কেন সাবজেক্ট হই সবসময়। ব্যাপারটা গরিবের বউ, সবার ভাবীর মত।”
নির্বাচনের প্রচারের সময় নিজে চুপ থাকলেও তা নিয়ে কথা হয় মন্তব্য করে শামীম বলেন, “আমি সত্য বলতে পছন্দ করি। তবে এখানে সব সত্য বলতে পারব না। এজন্য বিবেকের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
“এই কয়েকদিন আমি চুপ ছিলাম। আমি চুপ থাকার কারণে অনেক ইস্যু তৈরি হয়। ইস্যু তৈরি হলে এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ উল্টোপথে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন। আবার কেউ দলের সঙ্গে হেঁটে দলের ক্ষতি করছেন।”
আইভী কেন শামীম ওসমানকে ‘গদফাদার’ বলেছেন, সেই প্রশ্নও আসে সংবাদ সম্মেলনে।
উত্তরে শামীম বলেন, “কারো যদি ইচ্ছে হয় আমাকে গদফাদার বলতে তো বলবেন। দুদিন আগে ইচ্ছে হয়েছে ফাদার বলতে, বলেছেন। তিন দিন আগে মনে হয়েছে ব্রাদার বলতে, বলেছেন। তবে যে যাই বলেন, গডমাদার বইলেন না। কারণ আমি পুরুষ মানুষ। এসব গালি শুনতে শুনতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই এসবে আমি এখন ড্যাম কেয়ার।”
‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান’
সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এনে শামীম ওসমান তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামসুজ্জামান, তার মা নাগিনা জোহা এবং প্রয়াত ভাই নাসিম ওসমানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “আমি কাউকে ব্লেইম করি না। আপনারা এখানে অনেক আছেন। আল্লাহ সাক্ষী। কবরস্থান যখন শ্মাশানের মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, আমি শুধু বলেছিলাম, ইবলিশ, শয়তানের কাজ। অবশ্যই এটা ইবলিশ শয়তানের কাজ।
“আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছিল একজনের নাম ধরে, একজন মহিলার নাম ধরে। আমি তাকে ধমক দিয়ে বলেছিলাম, তার নাম কেন বল, সে তো কোনো সাবজেক্ট না! কারণ আমার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু, একটা প্রেস রিলিজ আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল।”
শামীম বলেন, “এখনো সেটাই চাই। আল্লাহর কাছে মাফ চান।… অনুরোধ করব, আল্লাহর কাছে মাফ চান। আমাদের সবাইকে একদিন যেতে হবে। যেতে হবেই। আল্লাহর কাছে মাফ চান। উনার কাছে মাফ চাইলে কিছু হবে না।”