পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১১৬টি উপজেলায় ভোট নেওয়া হবে আজ সোমবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়েছে ভোটকেন্দ্রে। বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে নির্বাচনী এলাকায় যান চলাচলের ওপর।
তবে সোমবার ভোট হওয়ার কথা ছিল ১২৩ উপজেলায়। কিন্তু ছয়টিতে সব পদের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ভোট আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। তাই ভোট হচ্ছে ১১৬টিতে।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে সংশ্নিষ্ট নির্বাচনী এলাকাগুলোতে টহল শুরু করেছেন বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পার্বত্য অঞ্চলে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে বিবদমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের ২৫ উপজেলার ভোটে সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় ইসির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসি কার্যালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনিয়ম ঠেকাতে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
পাঁচ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের জন্য ১৭ জেলার ১২৯টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের ৫টি উপজেলার ভোট তৃতীয় ধাপে এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার ভোট চতুর্থ ধাপে নেওয়া হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ছয় উপজেলার কোনো পদেই ভোট হবে না। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের রাউজান, মিরসরাই, নোয়াখালীর হাতিয়া, ফরিদপুর সদর, পাবনা সদর ও নওগাঁ সদর।
দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৭৭ জন প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন যথাক্রমে ৫৪৮ ও ৪০০ জন। ২৩ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এসব উপজেলায় অবশ্য বাকি পদগুলোতে আজ ভোট নেওয়া হবে। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও প্রার্থী ও ভোটারদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এক কোটি ৭৯ লাখ নয় হাজার ছয় জন ভোটার সাত হাজার ৩৯ কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখতে শনিবার থেকে মাঠে নেমেছেন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরও দু’দিন মাঠে থাকবেন তারা। এ ছাড়া সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রভেদে প্রতিটি কেন্দ্রেই থাকবে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রতি এলাকায় দুই থেকে তিন প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ, আর্মড পুলিশ মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে তিন দিনের জন্য মনিটরিং সেল এবং নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ইসি সচিবালয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। সংশ্নিষ্ট নির্বাচনী (উপজেলায়) এলাকায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
২৫ উপজেলায় সেনা মোতায়েন : খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের ২৫ উপজেলার ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, তিন পার্বত্য জেলাতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে কিছু সমস্যা আছে। দুর্গম এলাকা এবং বিরাজমান সংঘাতকে বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইলে তারা সাড়া দিয়েছেন। অন্যান্য জেলা-উপজেলাগুলোকে পুলিশ র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার মোতায়েন থাকবে। ১৭, ১৮ ও ১৯ মার্চ সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।
দুই ওসি প্রত্যাহার : পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বদলির প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার শিবগঞ্জ, নওগাঁর মান্দা, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসি সচিব বলেন, তদন্ত করে কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে যে ১১৬ উপজেলায় ভোট : ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল; রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, পীরগাছা, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগঞ্জ; গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর, সাদুল্যাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও পলাশবাড়ী; দিনাজপুর জেলার কাহারোল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, বিরামপুর, হাকিমপুর, বীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, বিরল, পার্বতীপুর, খানসামা ও ঘোড়াঘাট এবং বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকন্দি, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, কাহালু, গাবতলী ও সোনাতলায় দ্বিতীয় ধাপে ভোট হবে।
এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর, আত্রাই, নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশা, ধামইরহাট, বদলগাছী, রানীনগর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা ও মান্দা এবং পাবনা জেলার পাবনা সদর, আটঘরিয়া, বেড়া, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া ও সুজানগরে ভোট হবে।
সোমবার আরও ভোট হবে সিলেট জেলার সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার; মৌলভীবাজার জেলার মৌলভীবাজার সদর, বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এবং ফরিদপুর জেলার ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, চরভদ্রাসন, সদরপুর, সালথা, আলফাডাঙ্গা, মধুখালী, নগরকান্দা ও ভাঙ্গায়।
দ্বিতীয় ধাপে আরও ভোট হচ্ছে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, মিরসরাই, রাউজান ও হাটহাজারী; রাঙামাটি জেলার রাঙামাটি সদর, লংগদু, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, বরকল, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি; বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, থানচি, লামা, রুমা ও নাইক্ষ্যংছড়ি; খাগড়াছড়ি জেলার খাগড়াছড়ি সদর, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড় এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায়।