বিশ্বজুড়ে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে বর্ষবরণ উৎসব।বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০২০ সালকে বরণ করেছে নিউজিল্যান্ড। নতুন বছরের আগমনে আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়েছে অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ার।
একই চিত্র দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়াতেও।২০২০ সালের আগমনী মুহূর্তে সিডনি ঝলমলে হয়ে উঠেছে নানা রঙের আতশবাজিতে। অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানল সংকটের মধ্যেও সেখানে থেমে থাকেনি নতুন বছরকে বরণের আনন্দ-উৎসব।
নতুন বছর আগমনের মহূর্তে সিডনিতে আতশবাজি
এবার দাবানল সংকটের কারণে সিডনিতে আতশবাজি না করার আহ্বান জানিয়ে পিটিশনে সই করেছিলেন ২ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার কারণে দাবানল ভয়াবহ রূপ নিয়ে রাজ্যটি পুড়িয়ে ছারখার করায় ওই অঞ্চলের অনেক জায়গাতেই বর্ষবরণের রাতে আতশবাজি প্রদর্শনী নিষিদ্ধ হয়।কিন্তু সিডনির লর্ড মেয়র ক্লোভার মুর নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দিয়ে শহরটিতে আতশবাজি করার অনুমোদন দেন। “নতুন বছরে আতশবাজির আলো এ কঠিন সময়ে মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করবে”- এমনটিই মনে করেন বলে জানিয়েছে তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বানদুরা শহরতলীতে দাবনলে পুড়ে যাওয়া গাছ।
দাবানলের আগুনে পোড়া ধোঁয়ায় সিডনির আকাশ রক্ত-লাল হলেও শহরটির হারবার ব্রিজে নতুন বছরের আগমনী মুহূর্তে আকাশে আতশবাজির খেলা দেখতে ভিড় করে বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাদের উচ্ছ্বাসেও কোনো কমতি দেখা যায়নি। যদিও স্যোশাল মিডিয়ায় সিডনিতে এ আতশবাজির সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।তবে সিডনিতে আতশবাজি হলেও অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের অনেক শহরেই দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ওইসব জায়গায় এবার আতশবাজির উৎসব বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে মানুষ পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণের উৎসবে মেতেছে। বিশ্বের দেশে দেশে আনন্দ-উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস দেখা গেছে মানুষের মধ্যে। কানাডার মন্টিয়ালে বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। নানা রঙ আর মায়াবী আলোয় সেজেছে বিভিন্ন ভবন। ২০১৯ সালকে বিদায় জানিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টায় একে একে ২০২০ সালকে বরণ করে নেবে ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলো।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবারও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জমকালো ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে আতশবাজির আয়োজন করেছে।তবে হংকংয়ে এবার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ চলতে থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বর্ষবরণের রাতে ভিক্টোরিয়া হারবারে আতশবাজি বাতিল করা হয়।
হংকংয়ে নববর্ষের রাতে বিক্ষোভ চলার সময় এক বিক্ষোভকারীকে পাকড়াও করছে পুলিশ।
নতুন বছর শুরুর আগেও হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সেখানে ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন করে এবং নতুন বছরের আগমনীতে এক ভিডিও বার্তায় হংকংয়ের নেত্রী ক্যারি লাম বিক্ষোভকারীদেরকে শান্ত থাকা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বানও জানান।
হংকংয়ের সিম শা সুই এলাকায় নতুন বছরের কাউন্টডাউনে সামিল হওয়া বিক্ষোভকারীরা।
এ পরিস্থিতির মধ্যে হংকংয়ের ভিক্টোরিয়া হারবারে ঘড়ির কাঁটা রাত ১২ টা স্পর্শ করতেই আতশবাজির পরিবর্তে নিয়ন বাতিতে আলোকিত রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের গণতন্ত্রপন্থি স্লোগান দিয়ে শুরু হয়েছে ২০২০ সাল। কিন্তু নতুন বছরে পদার্পণের উদ্দীপনা ছিল না অনেকের মাঝেই। বিক্ষোভকারীদের কেউ বলেছেন, “এ বছর কোনো আতশবাজি হয়নি। তবে কোথাও না কোথাও হয়ত টিয়ার গ্যাস ছোড়া চলেছে।” আবার কেউ বলেছেন, “২০২০ সালেও লড়াই চলবে বলেই মনে করছি।”
ভারতের দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শিশুকোলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী।
অন্যদিকে, ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেও হাজারো মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা করেছে। নতুন এ আইন নিয়ে ভারতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে। নতুন বছরের আগমনী দিন মঙ্গলবারেও রাজধানী দিল্লিতে অন্তত তিনটি স্থানে এবং হায়দরাবাদেও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে।
ভারতের গোয়ায় নববর্ষ বরণের রাতে বর্ণিল আলোকছটায় ছাওয়া আকাশ। ছবি: ফেইসবুক।
এ পরিস্থিতির মধ্যেও বর্ষবরণের প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহ দেখা গেছে ভারতবাসীর মধ্যে। রাত বাড়তেই ভিড় বেড়েছে রাস্তায়। কেউ পরিবারের সঙ্গে কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছে বাইরে। ভারতজুড়ে চলছে শৈত প্রবাহ। কিন্তু সেসবকিছু গায়ে না মেখেই উৎসবে মেতেছে মানুষ। ভিড় জমেছে পার্কে। পাব-রেস্তোরাঁগুলোতে দেখা গেছে লম্বা লাইন। বাড়ি থেকে ক্লাব সেজেছে রঙিন আলোয়। ২০২০সালকে স্বাগত জানাতে পর্যটকের ঢল নেমেছে গোয়ায়। আলো আর আতশবাজিতে চলেছে বর্ষবরণ।