ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে সমর্থন দেন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের নেতারা।
এ সময় ব্যবসায়ীদের উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যা পড়েন তা জানেন। আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কোনো হয়রানির শিকার হতে হবে না। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে হেল্পলাইন চালু করা হবে। হোল্ডিং ট্যাপ দেওয়ার জন্য সফটওয়্যার হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে অটোমেশনে ট্রেড লাইসেন্স মিলবে। এর আগে আলাদা বক্তব্যে ব্যবসায়ীরা তার কাছে সিটির বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, হোল্ডিং ট্যাপ, যানজট, পরিবেশ দূষণ রোধ, নিরাপত্তা, ডেঙ্গুসহ নানা সমস্যার সমাধানের দাবি করেন। তিনি বিজয়ী হলে একটি একটি করে সব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এসব সমস্যা সমাধানে পর্যায়ক্রমে কাজ করার আশ্বাস দেন তিনি।
এই মেয়র প্রার্থী বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে গেছেন চাইলে অনেক কিছু করা সম্ভব। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী আবারও ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, সিটি করপোরেশন চালানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। জিডিপির ৩৩ শতাংশ অবদান ঢাকাবাসীর। এই ঢাকা সিটির সব সমস্যা সমাধান করা খুব সহজ কাজ নয়। তবে তিনি কাজ শুরু করেছেন। গত নয় মাস খুব কম সময়। সব করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে বিজয়ী হয়ে বাকি কাজ শেষ করতে চান তিনি। ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু অনেক বড় সমস্যা। এর জন্য কাজ শুরু করেছেন। গুলশানের লেকের পানি দূষণমুক্ত করতে কাজ করবেন। গুলশানে স্যুয়ারেজ লাইনের ব্যবস্থা নেই। তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া সিটির সমস্যা সমাধানে ৩৩৩ হটলাইন চালু করেছেন। এখন নতুন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘সবার ঢাকা’ নামে একটি অ্যাপ চালু করা হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকলে, সড়কে বাতি না থাকলে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। তখন সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা সমাধান করা হবে। নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে সিটি করপোরেশন অফিসে আসতে হবে না। অ্যাপের মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।
আতিক বলেন, এখন সিটি করপোরেশনে সনাতন পদ্ধতিতে অনেক কাজ হচ্ছে। আগামী দিনে অটোমেশনের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাপ নেওয়া হবে। ঘরে বসে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাপ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হবে। উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আকাশের যত তারা, সিটি করপোরেশনের তত ধারা। এমন প্রবাদ বাক্য থাকবে না। দুর্নীতি রোধ করতে সব ক্ষেত্রে অটোমেশন ও অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা শহরে ৪২ হাজার এলইডি লাইট আগামী ছয় মাসে দেওয়া হবে। গুলশান, বনানী ও বারিধারায় সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে উত্তর সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে। এসব কাজ করার জন্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করার অনুরোধ জানান।
রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যাতায়াত ব্যবস্থার বেশ পরিবর্তন করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আগারগাঁওয়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে করেছেন। ওই সড়কে রিকশা ও সাইকেলের আলাদা লেন আছে। এই সড়ক আগামী ১০ বছরে আর খোঁড়াখুঁড়ি করা হবে না। আগামী দিনে পরিকল্পিত সড়ক উন্নয়ন করে খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণা থেকে ঢাকাবাসীকে রেহাই দেওয়ার আশ্বাস দেন। নিরাপদে নারীদের ২৪ ঘণ্টা চলাচলের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচনে আতিকুল ইসলামকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, ৯ মাস খুবই কম সময়। মেয়রের দায়িত্বে থেকে তিনি সব কাজ করতে পারেননি। আগামী দিনে বিজয়ী হলে ঢাকা সিটির বড় পরিবর্তন আনবেন। সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। এ. কে. আজাদ বলেন, তিনি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর একজন সাবেক সফল সভাপতি ও ব্যবসায়ী। বিজিএমইএর দায়িত্বে থাকাকালে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক বিপদে পড়লে সবার আগে এগিয়ে গেছেন। শুধু ব্যবসায়ী নন, ঢাকা সিটির নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে তিনি কাজ করছেন। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ করে যাবেন তিনি। সবাই মিলে আতিকুল ইসলামকে নির্বাচিত করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আতিকুল ইসলাম নয় মাস খণ্ডকালীন সময়েও সফলভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেও মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি আশা করেন, আগামী মেয়াদের জন্য ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচিত করলে তিনি হতাশ করবেন না। তিনি নগর পিতা হবেন না, হবেন নগরের সেবক।
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, নগরবাসী যানজটে ক্ষতির সম্মুখীন হন। আতিকুল ইসলাম অঙ্গীকার করেছেন যানজটমুক্ত করবেন। এ কাজ করার জন্য সবাই মিলে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ আতিকুল ইসলামকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট এ দুই ইস্যুর সমাধান করবেন।
বারিধারা সোসাইটির সভাপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি চান আতিকুল ইসলাম পুনরায় মেয়র হবেন। ভোটারদের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী হিসেবে তাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের ব্যবসায়ীরা মেয়র পদে নির্বাচিত করার জন্য আতিকুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যবসায়ীদের বেশকিছু দাবি তুলে ধরে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লাইটিং, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা যেন হয়রানির শিকার না হন, এমন প্রতিশ্রুতি দাবি করেন। এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকার করেন আতিকুল ইসলাম।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মুনতাকিম আশ্রাফ, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, রেজাউল করিম রেজনু, বিপিজিএমইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএ মান্নান কচি, গুলশান ক্লাবের সভাপতি সাইফুর রহমান, গুলশান সোসাইটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি দেওয়ান সুলতান, এফবিসিসিআইর পরিচালক নাজ ফারহানা, বিসিআইর সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।