আপিল বিভাগের ছয়জন বিচারপতি যথেষ্ট বিবেচনা করেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নাকচ করেছেন বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে খালেদার জামিন আবেদন নাকচ করার পর প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর শুনানি নিয়ে খালেদার জামিন আবেদন নাকচ করে বেঞ্চ।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আদালতের কাছে উনারা জামিন চেয়েছিলেন। আমি যতটুকু দেখেছি, জামিনের দরখাস্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ তারিখে (আদালত) বলেছিলেন একটি মেডিকেল রিপোর্ট তাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। সেই মেডিকেল রিপোর্ট উপস্থাপনের পর বিবেচনা করবেন, প্রথম শুনানির দিন বলেছিলেন।
“আজকে আমি যতটুকু জেনেছি বিজ্ঞ আপিল বিভাগ এই রিপোর্ট পেয়েছেন এবং তারা তাদের বিবেচনায় দেখেছেন যে এইখানেই (বিএসএমএমইউ) তার (খালেদা) চিকিৎসা করা যায়, সেটা অবর্জারভেশনে আছে আমি শুনেছি। জামিনের আদেশ তারা নাকচ করে দিয়েছেন।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “আপিল বিভাগের সম্মানিত ছয়জন বিচারপতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই যথেষ্ট বিবেচনা করেছেন। বিবেচনায় তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা যেহেতু আইনের শাসনে বিশ্বাস করি, আমাদের সেটা মানতেই হবে। আমি মনে করি অবর্জারভেশন যেটা দিয়েছেন, তার আলোকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করণীয় থাকে তারা নিশ্চয়ই করবে।”
জামিন নাকচের পর বিএনপি আইনজীবীরা বলেছেন, যে মেডিকেল রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছে সেটা সঠিক নয়।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “শুনানির প্রথম তারিখে আপনারা দেখেছেন আদালত কক্ষে তারা কী তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে। আমি তখনই বলেছিলাম- যখনই এমন কিছু হয়, যেটা তাদের পক্ষে যায় না, যত যুক্তিই থাকুক রায়ের বা প্রতিবেদনের, ওনারা অভ্যাসগতভাবে বলেন এটা ঠিক না।
“ছয়জন ডাক্তার পরীক্ষা করে তাদের মতামত দিয়েছেন বলে শুনেছি। উনারা তো কেউ ডাক্তার নন। আসল ডাক্তার যখন প্রতিবেদন সর্বোচ্চ আদালতে দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে সেটা সম্পর্কে সন্দেহ উনারা করতে পারেন, আমি করি না।”
সঠিক চিকিৎসা মানে কী প্যারোলে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করা- এমন প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “উনারা জামিন চেয়েছিলেন মেডিকেল গ্রাউন্ডে। সেটা আদালত বিবেচনা করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত তার মেডিকেল রিপোর্ট দেখে, বিবেচনা শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তার যে অবস্থা জামিন দিয়ে তাকে অন্য কোথাও চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চিকিৎসা হচ্ছে সেটাই যথেষ্ট।”
পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখেন উনাদের তো যথেষ্ট আইনজীবী আছেন। আমি রিপোর্টে শুনেছিলাম ৪৩ জনের প্যানেল আছে। আমার মনে হয় ওই ৪৩ জনের প্যানেলই উনাকে বুদ্ধি দেয়ার জন্য যথেষ্ট, আমার বুদ্ধি উনার প্রয়োজন নেই।”
আইসিজের রায়ের পর পরবর্তী কর্মপন্থা
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) আদেশ বা রায়ের পর পরবর্তী কর্মপন্থায় যাওয়া হবে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এ কোর্টে বাংলাদেশ কেন মামলা করল না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের এখতিয়ার যেটা, মিয়ানমারে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা বিচারকরা দেখবেন এবং দুই পক্ষের কথা শুনবেন।
“বাংলাদেশ (মামলা) করতে পারত নাকি পারত না, এ মুহূর্তে এটি অ্যাকাডেমিক ডিসকাশন, এই মুহূর্তে এ আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমার মনে হয় রাখাইন স্টেটে যে নৃশংসতা হয়েছে সারা বিশ্বে তা গভীরভাবে অনুধাবন করার জন্য, প্রচার করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।“
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরাতে এ কোর্টের রায়ে কোনো লাভ হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস যে রায় দেবে তার ওপর নির্ভর করবে যে আমরা কি ফল পাব। আজ এ ফল সম্পর্কে বলা হবে প্রিমেচিউর।”
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সহজ হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী এক্ষেত্রে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন।