তারা দুজনই তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী, দুজনই ছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি, দুজনেরই রাজনীতিতে আসা আকস্মিকভাবে।
এত মিলের পর এবার আরেকটি মিল তৈরি করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র হয়ে আনিসুল হকের চেয়ারে বসতে চলেছেন আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মেয়র পদের এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আতিক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির শাফিন পেয়েছেন ৫২ হাজার ভোট।
আনিসুল হকের মৃত্যুতে এই উপনির্বাচন হল। এতে বিজয়ী আতিক মেয়রের পদে থাকবেন এক বছর। এরপর আবার ভোট হবে।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটির প্রথম নির্বাচনে চমক দেখিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন আনিসুল হক। তাকে ভোটের লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
চার বছর আগের ওই নির্বাচনে আনিসুল ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭ ভোটের ব্যবধানে।
ভোটের ক্ষেত্রে আনিসুলকে ছাড়িয়ে গেছেন আতিক; তবে এই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপির কেউ ছিলেন না। সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলার পর ভোট বর্জন করে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল।
ফলে রাজধানীতে নিরুত্তাপ এই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩১ দশমিক ০৫ শতাংশ।
চার বছর আগে ভোটের দিন আনিসুল হক; আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও আছে পূর্বসূরির স্বপ্ন বাস্তবায়ন
আনিসুলকে অনুসরণ করে রাজনীতিতে আসা আতিক তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও পূর্বসূরি আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার অঙ্গীকার করেছেন।
আনিসুল হকের ‘স্মার্ট ঢাকা’ গড়ার প্রতিশ্রুতির মতো আতিকও তার নির্বাচনী ইশতেহার সাজান ‘সুস্থ, সচল ও আধুনিক’ ঢাকা গড়ার অঙ্গীকারে।
আনিসুল হকের শুরু করা প্রকল্পগুলো শেষ করায় গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকা উত্তরে মশক নিধন, বিশুদ্ধ বাতাস ফিরিয়ে আনা, খেলাধূলা ও অন্যান্য গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য উন্মুক্ত পার্ক ও মাঠ তৈরি করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বহুতল ও ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার।
এক বছর মেয়াদে তা সম্ভবপর কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে রাজনীতিতে থেকে যাওয়ার ইঙ্গিতই ছিল ৫৮ বছর বয়সী আতিকের। “মেয়াদকাল চিন্তা করে ইশতেহার করা হয়নি। এটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে করা হয়েছে।”
শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য ঢাকার কাটালেও আতিকের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার কর্মস্থল নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৯৬১ সালের ১ জুলাই তার জন্ম।
মা মাজেদা খাতুন ও বাবা পুলিশ কর্মকর্তা প্রয়াত মমতাজউদ্দিন আহমেদের ১১ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট আতিক। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন তিনি।
ব্যবসায়ী ও প্রকৌশলী বড় ভাই শফিকুল ইসলামের হাত ধরে ১৯৮৫ সালে ব্যবসা অঙ্গনে ঢোকেন আতিক, তার মধ্যেই স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি।
তৈরি পোশাকের ১৬ ধরনের ব্যবসা নিয়ে তার ইসলাম গার্মেন্টেসের বর্তমান কর্মী সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার।
আতিকের মেজভাই মো. তাফাজ্জল ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি। আরেক ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইনুল ইসলাম বিডিআর বিদ্রোহের পর পুনর্গঠিত বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
আতিকুলের স্ত্রী ডেন্টাল সার্জন শায়লা সাগুফতা ইসলাম, তাদের একমাত্র সন্তান বুশরা আফরিন।
২০১৩-১৪ মেয়াদে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ছিলেন আতিক; বিজিএমইএ’র উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে তিনি শুরু করেন ‘ঢাকা এ্যাপারেল সামিট’ আয়োজন।
বর্তমানে পোশাক খাতের শ্রম পরিস্থিতি ও পণ্যের মান উন্নয়নে গঠিত ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি-সিবাইয়ের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
২০১৫ সালে আতিক বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব নেন। তার সময়ে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবল টুর্নামেন্টে’ প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ দল।
উত্তরার বাসিন্দাদের শরীরচর্চা, খেলাধুলা এবং আড্ডার কেন্দ্র হিসেবে আতিকের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘বাংলাদেশ ক্লাব’। তার উদ্যোগে ওই এলাকায় গঠিত হয়েছে ‘হাটি হাটি খাই খাই’ নামের একটি সংগঠন, যেটি শরীরচর্চার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডও যুক্ত।