“সংস্কারের জন্য নির্বাচন পরে, নাকি নতুন দল গঠন করার জন্য নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে? দল তৈরি করার জন্যই নির্বাচনে বিলম্ব করা হচ্ছে।”
গত ৫ অগাস্টের পর ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ শেখ হাসিনার জায়গায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম।
মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে পর্যন্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শত্রু শেখ হাসিনা থাকলেও এরপর সে জায়গায় আন্দোলনকারীরা দাঁড়িয়ে গেছেন।
“এই কারণেই বলা হচ্ছে ‘৭২ এর সংবিধান ছুঁড়ে ফেলে দাও, জাতীয় সংগীত বাতিল কর’। বৈষম্য একটা শব্দ ব্যবহার করছে তারা, কিন্তু সেটা দূর করার ধারেকাছেও নেই তারা। সেই লড়াইও হবে। সাধারণ ছাত্ররা আর আসছে না। সেজন্য বহু দলের সঙ্গে মিলে তারা ভিতটা শক্তিশালী করতে চাচ্ছে।”
কমরেড মণি সিংহের ৩৪তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে এই সভা হয়। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এই সভা আয়োজন করে কমরেড মণি সিংহ ট্রাস্ট।
সভায় সিপিবি সভাপতি বলেন, “দেশে অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। সংস্কারের জন্য নির্বাচন পরে নাকি নতুন দল গঠন করার জন্য নির্বাচন বিলম্ব করা হচ্ছে?
“দল তৈরি করার জন্য নির্বাচনে বিলম্ব করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ছাড়া এই ফোর্স সাইজ করা যাবে না।”
শাহ আলম বলেন, “ওবায়দুল কাদেরের টোন, শেখ হাসিনার টোন এই ছেলেগুলোর মধ্যেও দেখছি। সেজন্য ইমিডিয়েট দেশকে নির্বাচনের রোডম্যাপে ঢুকায় দিতে হবে। তাহলে এরা মার্জিনালাইজ হয়ে যাবে।”
গত ১১ নভেম্বর বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার প্রসঙ্গ টেনে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “খুবই অন্যায় কাজ। আমরা অন্যদের মতো ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না।
“মুজিবের ছবি থাকবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন মওলানা ভাসানীর ছবি, কমরেড মণি সিংহের ছবি এখানে নাই কেন? শেরে বাংলার ছবি থাকুক, জিয়াউর রহমানের ছবি থাকুক, কর্নেল তাহেরের ছবি থাকুক।”
বিশৃঙ্খল অবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার বিপ্লবী বা স্বাভাবিক সরকার নয়। অন্তর্বর্তী সরকার- এই কথার মধ্য দিয়ে তাদের কাজকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
“গণতান্ত্রিক পরিবেশ করে দিতে হবে। সেটা না করে এখন আপনারা বলা শুরু করবেন মনে হয়, ‘চিরদিন দরকার, সংস্কার পার্টির সরকার’।
‘আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় পরিণত হয়েছে আর আফগানিস্তানও কাঁধের উপর শ্বাস ফেলছে’ মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কী সেই ফাঁদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে? এখানে জনপ্রতি আয় ১০ হাজার ডলার হয়ে লাভ কী যদি নারী স্কুলে যেতে না পারে, সংস্কৃতি বিকাশ করতে না পারে? সংস্কৃতির ওপর আঘাত কিন্তু অলরেডি তৈরি করে দিয়েছে মৌলবাদী শক্তি।”
আলোচনা সভার শুরুতে কমরেড মণি সিংহের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা।
সভা শেষে তানভীর মোকাম্মেল নির্মিত ‘কমরেড মণি সিংহ: সোমেশ্বরী পাড়ের কিংবদন্তী বিপ্লবী’ নামের একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়।
১৯০১ সালের ২৮ জুলাই কলকাতার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন মণি সিংহ। তিনি ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা এবং সিপিবির সভাপতি ছিলেন।