সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী হতে না পারলে দেশ ৫০ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। সারা দেশ থেকে শতাধিক প্রতিনিধির অংশ নেওয়া সম্মেলনে লন্ডন থেকে স্কাইপে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দেন। সমাপনী পর্বে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু।
সংগঠনের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএন তপন দে’র পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন-ফ্রন্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অ্যালবার্ট পি কস্টা, অর্পণা রায় দাস, সুশীল বড়ুয়া, জন গোমেজ প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ভোটের পরিবেশ না থাকায় আমরা কেউ ভোট দিতে পারি না। তাই এই গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। না হলে বাংলাদেশ অন্তত ৫০ বছরের জন্য একটা কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্যে পড়বে। কারও জীবনের কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না।’
বিএনপি হিন্দুবিরোধী-আওয়ামী লীগের এ অপপ্রচার মানুষ আর বিশ্বাস করে না বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা মার্কেটিং করে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাছে অপপ্রচার চালায় বাংলাদেশে বিএনপি হচ্ছে একটা হিন্দুবিরোধী সংগঠন। এটা কি এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে? আপনারা বিশ্বাস করেন? বরং আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা (অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন) নিরাপদ থাকেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের যে ভিশন ২০৩০ এবং যে ৩১ দফা করেছি, সেখানে সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্র“তি রয়েছে। গণতন্ত্র থাকলে সেটা তো থাকবেই। একমাত্র সুরক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের লড়াই-সংগ্রামে আমাদের জয়ী হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’
১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে ভারতের রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের ঘটনার সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধানে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, রামুতে বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগ-হামলার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, উদ্দেশ্য একটাই তাদের সম্পত্তি দখল করা, তাদের বিতাড়িত করা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করা। এটা এখন লোকে বোঝে, এটা আর মানুষ বিশ্বাস করে না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কেউ নিরাপদ বোধ করেন না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কেউ নিরাপদ বোধ করে না। সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করে না। কখন কাকে কোন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফেলবে। ৬শর বেশি লোক গুম হয়েছে। হত্যা করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আপনাদের কমিউনিটির বহু লোককে আসামি করেছে, এখনো তারা জেলে আছেন। এই করে তারা ক্ষমতায় টিকে আছে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশে চলমান সব সমস্যার উৎস ফ্যাসিবাদ, এর প্রধান শেখ হাসিনা। আগে তাকে সরাতে হবে। আজ শুধু হিন্দুরাই নির্যাতিত হচ্ছে না, মুসলমানরাও নির্যাতিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে গোপালগঞ্জ ছিল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজাকারের এলাকা। সেখানে এখন বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার এলাকা-এটা বুঝতে হবে।’