দৃঢ় ভিত পেয়ে ঝড় তোলেন ওয়েন মর্গ্যান। আফগান বোলিং গুঁড়িয়ে দলকে নিয়ে যান রানের পাহাড়ে। বিশাল রান তাড়ার চেষ্টাতেই গেল না গুলবাদিন নাইবের দল। বড় জয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠল ইংল্যান্ড।
একপেশে ম্যাচে ১৫০ রানে জিতেছে মর্গ্যানের দল। ৩৯৭ রান তাড়ায় ৮ উইকেটে ২৪৭ রান করেছে আফগানিস্তান।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডকে পথ দেখান জনি বেয়ারস্টো ও জো রুট। রানের গতিতে দম দেওয়ার কাজটা করেন মর্গ্যান। আফগানদের চোখের পানি-নাকের পানি এক করে খেলেন ১৪৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। শেষ ২০ ওভারে ২৩৩ রান তুলে বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। এই আসরেই বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ৩৮৬ ছাড়িয়ে ৬ উইকেটে করে ৩৯৭ রান।
রান তাড়া নয়, আফগানিস্তানের মনোযোগ ছিল পুরো ৫০ ওভার খেলায়। তাতে সফল তারা। জফরা আর্চার, আদিল রশিদ ও মার্ক উডের ছোবল এড়িয়ে করেছে আড়াইশর কাছাকাছি রান।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল সাবধানী। জেসন রয়ের চোটে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে মাঠে নামা জেমস ভিন্স ফিরেন থিতু হয়ে। জো রুট ক্রিজে যাওয়ার পর বাড়ে রানের গতি। সাবধানী পায়ে এগোনো বেয়ারস্টো পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৬১ বলে, ওয়ানডেতে তার মন্থরতম।
পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর শট খেলতে শুরু করেন বেয়ারস্টো। আশা জাগান সেঞ্চুরির। তবে গুলবাদিন নাইবের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৯০ রানে থামেন এই ওপেনার। ভাঙে ১২০ রানের জুটি।
মর্গ্যান যখন ক্রিজে যান তখন ৪৫ রানে ব্যাট করছিলেন রুট। ডানহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান যতক্ষণে ৭০ স্পর্শ করেন, ততক্ষণে ঝড় তুলে সেঞ্চুরি করে ফেলেন ইংলিশ অধিনায়ক। ৫৭ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি, বিশ্বকাপের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম।
ক্রিজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফ্রি-হিটে নাইবকে ছক্কায় উড়িয়ে ডানা মেলেন মর্গ্যান। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের পরের বলেও তুলে নেন ছক্কা। ব্যক্তিগত ২৮ রানে রশিদ খানের বলে ক্যাচ দিয়েও ফিল্ডারের ব্যর্থতায় বেঁচে যান। লেগ স্পিনারকে সেই ওভারে দুইবার ওড়ান ছক্কায়।
মর্গ্যানের তাণ্ডবের রাশ টানতে পারেননি আফগান কোনো বোলার। প্রথম ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৬৪ রান তোলা ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় তরতর করে।
অধিনায়ক শটের পসরা সাজিয়ে বসার পর প্রায় দর্শক হয়ে যাওয়া রুটও শট খেলার চেষ্টায় ছিলেন। সেই চেষ্টাতেই নাইবের স্লোয়ারে সীমানায় ধরে পড়ে শেষ হয় তার ৮৮ রানের ইনিংস। ভাঙে ১৮৯ রানের জুটি।
এক বল পর লং অনে ধরা পড়েন মর্গ্যান। শেষ হয় ৭১ বলে ১৭ ছক্কা ও চারটি চারে গড়া ১৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। গড়েন ওয়ানডেতে এক ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যান সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ছাড়িয়ে যান ১৬ ছক্কা হাঁকানো রোহিত শর্মা, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ক্রিস গেইলকে।
দ্রুত কিছু উইকেট হারালেও মন্থর হয়নি ইংল্যান্ডের এগিয়ে চলা। দলে ফেরা মইন আলি ৯ বলে চার ছক্কা ও ১ রানে খেলেন ৩১ রানের টর্নেডো ইনিংস। সর্বোচ্চ দলীয় ছক্কার রেকর্ডে ইংল্যান্ড নিজেদেরই (২৪টি) ছাড়িয়ে থামে ২৫টিতে।
ঝড় বয়ে গেছে রশিদের ওপর দিয়ে। ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়ে বিশ্বকাপে গড়েছেন সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড। ওয়ানডেতে এর চেয়ে বেশি রান দেওয়ার নজির আছে কেবল একটি।
প্রায় চারশ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৫৭ ডট বল খেলেছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। ওপেনিংয়ে নামা অধিনায়ক নাইব ছাড়া আর কেউ সেভাবে বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেনি।
মন্থর ব্যাটিংয়ে এগোনো রহমত শাহকে থামান রশিদ। ইংলিশ লেগ স্পিনার পরে বিদায় করেন সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগানকে। আস্থার সঙ্গে খেলে ফিফটি তুলে নেওয়া হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে দারুণ এক স্লোয়ারে বোল্ড করেন আর্চার। ৫২ রানে ৩ উইকেট নেন গতিময় এই পেসার। রশিদ ৩ উইকেট নেন ৬৬ রানে।
দুর্দান্ত সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মর্গ্যান।
৮ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠেছে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচেই হেরে যাওয়া আফগানিস্তান আছে সবার নিচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৯৭/৬ (ভিন্স ২৬, বেয়ারস্টো ৯০, রুট ৮৮, মর্গ্যান ১৪৮, বাটলার ২, স্টোকস ২, মইন ৩১*, ওকস ১*; মুজিব ১০-০-৪৪-০, দৌলত ১০-০-৮৫-৩, নবি ৯-০-৭০-০, নাইব ১০-০-৬৮-৩, রহমত ২-০-১৯-০, রশিদ ৯-০-১১০-০)
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৪৭/৮ (জাদরান ০, নাইব ৩৭, রহমত ৪৬, শাহিদি ৭৬, আসগর ৪৪, নবি ৯, নাজিবউল্লাহ ১৫, রশিদ ৮, ইকরাম ৩*, দৌলত ০*; ওকস ৯-০-৪১-০, আর্চার ১০-১-৫২-৩, মইন ৭-০-৩৫-০, উড ১০-১-৪০-২, স্টোকস ৪-০-১২-০, রশিদ ১০-০-৬৬-৩)
ফল: ইংল্যান্ড ১৫০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েন মর্গ্যান