তিন ফিফটিতে গুলবাদিন নাইবের দলকে বড় লক্ষ্য দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইকরাম আলি খিলের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়া করে জেতার আশা জাগিয়েছিল আফগানিস্তান। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শেষ করেছে জেসন হোল্ডারের দল।
লিডসের হেডিংলিতে বৃহস্পতিবার ২৩ রানে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩১২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ম্যাচের শেষ বলে ২৮৮ রানে গুটিয়ে গেছে আফগানিস্তান।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দৃঢ় ভিত গড়ে দিয়েছিলেন শেই হোপ ও এভিন লুইস। শেষটায় ঝড় তোলেন নিকোলাস পুরান ও হোল্ডার। শেষ ১০ ওভারে ১১১ রান নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে করে ৩১১ রান। প্রমোশন পেয়ে তিনে নেমে দারুণ এক ইনিংসে আফগানদের কক্ষপথে রেখেছিলেন ইকরাম। তরুণ এই কিপার-ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দিশা হারিয়ে ফেলা দলটি জয়শূন্য থেকে বিশ্বকাপ শেষ করল।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এই আফগানিস্তানে কাছে দুইবার হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মূল পর্বের লড়াইয়ের শুরুটাও ভালো হয়নি তাদের। বিশ্বকাপে নিজের সবশেষ ইনিংসে ৭ রান করে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন ক্রিস গেইল।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা দলটির পরিস্থিতি হতে পারতো আরও খারাপ। পাঁচ রানে রশিদ খানকে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান হোপ। শুরু থেকে টাইমিং পেতে ভুগছিলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। আস্থার সঙ্গে খেলা লুইস সে সময় সচল রাখেন রানের চাকা। রশিদকে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় শেষ হয় তার ৫৮ রানের ইনিংস।
ক্রিজে যাওয়ার পর থেকে শট খেলছিলেন শিমরন হেটমায়ার। কঠিন সময় পার করে দিয়ে শট খেলতে শুরু করেন হোপও। দ্রুত জমে যায় দুই তরুণের জুটি। দৌলত জাদরানের বলে নুর আলি জাদরানের অসাধারণ এক ক্যাচে থামেন হেটমায়ার। ভাঙে ৬৫ রানের জুটি।
থিতু হওয়ার পর দ্রুত রান তুলছিলেন হোপ। রানের গতি বাড়াতে খেলছিলেন ঝুঁকি নিয়ে। কাল হয় সেটাই। নবিকে ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন রশিদের হাতে। ৯২ বলে ৭৭ রান করে ফিরেন হোপ।
দৃঢ় ভিত দারণভাবে কাজে লাগান পুরান ও হোল্ডার। আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে গড়েন শতরানের জুটি। দলকে নিয়ে যান তিনশ রানে। পুরানের রান আউটে ভাঙে ১০৫ রানের জুটি। বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৪৩ বলে করেন ৫৮ রান। পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ১ চার ও চার ছক্কায় গড়া হোল্ডারের ৪৫ রানের ইনিংস।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই অধিনায়ক নাইবকে হারায় আফগানিস্তান। তিনে নেমে ইকরাম খেলেন আস্থার সঙ্গে। রহমত শাহর সঙ্গে দ্রুত জমে যায় তার জুটি। দারুণ এক স্লোয়ারে রহমতকে ফিরিয়ে ১৩৩ রানের জুটি ভাঙেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।
ব্যাটিং অর্ডারে আরও পরিবর্তন এনে চারে পাঠানো হয় নাজিবউল্লাহ জাদরানকে। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জুটিতে দ্রুত এগিয়ে যায় আফগানিস্তান। ৮ চারে ৮৬ রান করা ইকরামকে এলবিডব্লিউ করে এই জুটি ভাঙেন অনিয়মিত অফ স্পিনার গেইল।
এক বল পর নাজিবউল্লাহ রান আউট হয়ে গেলে আর তেমন কোনো জুটি পায়নি আফগানিস্তান। কেমার রোচ ও ব্র্যাথওয়েটের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে একের পর এক ক্যাচ দিয়ে ফিরে দলটির মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা।
৬৩ রানে ৪ উইকেট নেন অলরাউন্ডার ব্র্যাথওয়েট। রোচ ৩ উইকেট নেন ৩৭ রানে।
৯ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৫। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। টানা নয় ম্যাচে হারা আফগানিস্তান আসর শেষ করলো তলানিতে থেকে।
৭৭ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন হোপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ৩১১/৬ (গেইল ৭, লুইস ৫৮, হোপ ৭৭, হেটমায়ার ৩৯, পুরান ৫৮, হোল্ডার ৪৫, ব্র্যাথওয়েট ১৪*, অ্যালেন ০*; মুজিব ১০-০-৫২-০, দৌলত ৯-১-৭৩-২, শিরজাদ ৮-০-৫৬-১, গুলবাদিন ৩-০-১৮-০, নবি ১০-০-৫৬-১, রশিদ ১০-০-৫২-১)
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৮৮ (গুলবাদিন ৫, রহমত ৬২, ইকরাম ৮৬, নাজিবউল্লাহ ৩১, আসগর ৪০, নবি ২, শিনওয়ারি ৬, রশিদ ৯, দৌলত ১, শিরজাদ ২৫, মুজিব ৭*; কটরেল ৭-০-৪৩-০, রোচ ১০-২-৩৭-৩, টমাস ৭-০-৪৩-১, হোল্ডার ৮-০-৪৬-০, অ্যালেন ৩-০-২৬-০, ব্র্যাথওয়েট ৯-০-৬৩-৪, গেইল ৬-০-২৮-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শেই হোপ