বারবার রঙ পাল্টানো ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিলেন ইমাদ ওয়াসিম। ক্রমশ মন্থর হয়ে যাওয়া পিচে খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের চোখ রাঙানি এড়িয়ে দলকে এনে দিলেন রোমাঞ্চকর এক জয়। টিকিয়ে রাখলেন পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালের আশা।
লিডসের হেডিংলিতে শনিবার ৩ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। ২ বল বাকি থাকতে ২২৮ রানের লক্ষ্যে পৌছে যায় তারা।
আফগানিস্তানের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের সাতজনই পৌঁছান দুই অঙ্কে। তাদের কেউই ইনিংস খুব একটা বড় করতে না পারায় বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি আফগানরা। ৯ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ২২৭ রান।
পাকিস্তান ইনিংসেই চিত্রটা ছিল প্রায় একইরকম। তবে স্পিনাররা আরও বেশি সুবিধা পাওয়ায় সরফরাজ আহমেদের দলের জন্য কাজটা ছিল আরও কঠিন। স্পিন পরীক্ষায় উতরে গিয়ে চার নম্বরে উঠে এসেছে পাকিস্তান। ৮ ম্যাচে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পয়েন্ট ৯। আটটি ম্যাচই হারল আফগানিস্তান।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় বলে ফখর জামানকে হারায় পাকিস্তান। নতুন বলে দ্রুত রান তোলেন ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম। মোহাম্মদ নবির বলে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় ইমাম স্টাম্পড হলে ভাঙে ৭২ রানের জুটি। নবির বলেই সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বাবর।
মিডল অর্ডারের কেউ টানতে পারেননি পাকিস্তানকে। মোহাম্মদ হাফিজ, হারিস সোহেল, সরফরাজ আহমেদ ফিরেন থিতু হয়ে। ৩৯ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ১৫৬/৬। স্পিনাররা বিশাল টার্ন পাচ্ছেন এমন উইকেটে শেষ ১১ ওভারে ৭২ রান করা ছিল ভীষণ কঠিন।
দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই সমীকরণ মেলান ওয়াসিম। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সমীকরণ সহজ করে ফেলেন গুলবাদিন নাইবের করা ৪৬তম ওভারে তিন চারে ১৮ রান নিয়ে। জয়ের জন্য শেষ ৪ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়ে ২ বল বাকি থাকতেই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ওয়াসিম। ৫৪ বলে পাঁচটি চারে করেন ৪৯ রানে। বোলিংয়ে দুই উইকেট নেওয়া এই অলরাউন্ডার জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
৯ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ১৫ রান করে দলের নাটকীয় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন ওয়াহাব।
উইকেট এমনিতে মন্থর। সুবিধা পেয়েছেন স্পিনাররা। শুরুতে কিছুটা আদ্রতা ছিল উইকেটে। সেটা কাজে লাগিয়ে আফগানদের কাঁপিয়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পরপর দুই বলে বিদায় করেন গুলবাদিন নাইব ও হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া আফগানরা শুরুতেই পড়ে যায় চাপে।
এমনতি মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত হলেও এদিন শুরু থেকে শট খেলছিলেন রহমত শাহ। বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমের দ্রুত গতির এক ডেলিভারিতে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।
এরপরই নিজেদের সেরা জুটি পায় আফগানিস্তান। প্রমোশন পেয়ে চার নামা ইকরাম আলি খিলকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন আসগর আফগান। সাবেক এই অধিনায়ক ক্রিজে গিয়েই চড়াও হন বোলারদের ওপর। বেশি আক্রমণাত্মক খেলাটাই কাল হয় তার জন্য। লেগ স্পিনার শাদাব খানকে বেরিয়ে গিয়ে ওড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন বোল্ড হয়ে। ভাঙে ৬৪ রানের জুটি।
এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি আফগানিস্তান। সাত নম্বরে নেমে রানের গতিতে দম দেওয়া নাজিবউল্লাহ জাদরানকে বোল্ড করে থামান আফ্রিদি। রশিদ খানকে পরে দারুণ এক স্লোয়ারে বিদায় করেন তিনি। ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার বাঁহাতি এই পেসার।
বোলিংয়ের সাফল্য মিলিয়ে যেতে বসেছিল ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতায়। তবে শেষের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের হাসিতেই মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২২৭/৯ (রহমত ৩৫, গুলবাদিন ১৫, শাহিদি ০, ইকরাম ২৪, আসগর ৪২, নবি ১৬, নাজিবউল্লাহ ৪২, সামিউল্লাহ ১৯*, রশিদ ৮, হামিদ ১, মুজিব ৭*; ওয়াসিম ১০-০-৪৮-২, আমির ১০-১-৪১-০, আফ্রিদি ১০-০-৪৭-৪, হাফিজ ২-০-১০-০, ওয়াহাব ৮-০-২৯-২, শাদাব ১০-০-৪৪-১)
পাকিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২৩০/৭ (ফখর ০, ইমাম ৩৬, বাবর ৪৫, হাফিজ ১৯, হারিস ২৭, সরফরাজ ১৮, ওয়াসিম ৪৯*, শাদাব ১১, ওয়াহাব ১৫*; মুজিব ১০-১-৩৪-২, হামিদ ২-০-১৩-০, গুলবাদিন ৯.৪-০-৭৩-০, নবি ১০-০-২৩-২, রশিদ ১০-০-৫০-১, সামিউল্লাহ ৮-০-৩২-০)
ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমাদ ওয়াসিম