বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে সোমবার প্রতিবাদী নাটক, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সবার মুখে ছিল একই দাবি ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়:
সোমবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পার্শ্ববর্তী সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘কাউকে তার আদর্শিক পরিচয়ের কারণে মেরে ফেলা যায় না। সে যদি শিবির করে, আর শিবির করা যদি ঘৃণ্য হয়, তাহলে দেশে আইন আছে। আদালত তার বিচার করবে। নাস্তিক বা শিবির বলে তাকে হত্যা করা জায়েজ নয়। ভারতের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছে আবরার। এটা কি তার অপরাধ ছিল?
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কাব্য কৃত্তিকা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়:
বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘হিউম্যান রাইটস’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা এখন ঘরেবাইরে কোথাও নিরাপদ নই। রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা ঘটছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় সামগ্রিকভাবে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়:
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সুরমা আবাসিক এলাকার গেট প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান জুয়েল, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের নোমান খন্দকার ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মেহরাব বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন আজকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যে দখলদারিত্ব, ভয়ের রাজত্ব কায়েম করছে তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়:
মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন ও প্রতিবাদী নাটক প্রদর্শন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেলে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কোনো কিছু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বিমত পোষণ বা সমালোচনা করলেই কেন আমাকে মার খেতে হবে। কেন জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেওয়া হবে।’ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কিছু নেতাকর্মী রোববার রাতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।