আবাসনের সাত প্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

image-71267-1563195534

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুকুর, খাল ও জলাশয় ভরাট করার মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের মনমানসিকতার জন্যই এখন ঢাকা শহরে খাল ও পুকুর দেখা যায় না। এরফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোন পরিকল্পনা করার সময় জলাশয়গুলোর কথা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, এগুলো পানির আধার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এগুলো পানি ধরে রাখে, যা জলাবদ্ধতা হ্রাসে সহায়তা করে। ইতোমধ্যেই জলাশয়গুলো রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোড এলাকায় সাতটি আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।

শেখ হাসিনা বলেন, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, আবাসন, কলকারখানা যা-ই নির্মাণ করা হোক না কেন, তা সুপরিকল্পিত উপায়ে করতে হবে। সরকার এলোমেলোভাবে কোন নির্মাণ কাজের অনুমতি দিতে চায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নগরীগুলোকেই উন্নত করতে চাই না, বরং গ্রামগুলোতেও সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।’

শেখ হাসিনা সাতটি প্রকল্প উদ্বোধন করে বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্য, সচিববর্গ, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১৬৭১টি ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সুন্দর পরিবেশে প্রকল্প এলাকায় আবাসিক সুবিধা পেয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা তাদের দায়িত্ব পালনে আরো মনোযোগি হবেন।

রাজধানীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ঢাকায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের আবাসিক সুবিধা বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।। ২০১৪ সালে শুধুমাত্র ৮ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারির ঢাকায় আবাসন সুবিধা ছিল।

সরকারপ্রধান বলেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের ১৬টি প্রকল্পের অধীন ৬৩৫০টি ফস্ন্যাট তৈরি করা হয়েছে এবং ১৩টি প্রকল্পের অধীন আরো ১৬৭৪টি ফ্ল্যাট তৈরির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুলশান, ধানমন্ডি এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় ২০টি পরিত্যাক্ত বাড়িতে ৩৯৮ টি ফ্ল্যাট এবং চট্রগ্রামে পরিত্যাক্ত বাড়িতে ১৮২৪টি ফ্ল্যাট ও ৬৪ টি জেলায় ৬৪টি ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। আরো ১৫টি পরিত্যাক্ত বাড়িতে ৩১৭ টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে ৬৪ টি জেলায় ২৮১৬টি আবাসন ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বল্প ও মধ্য আয়ের লোকদের মাঝে বিক্রয় করার জন্য ইতোমধ্যেই ৩৩৫২৬ টি পল্গট এবং ৮,৯২২ টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছে। এর মধে উত্তরা এ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের অধীন ৬৬৩৬ টি ফ্ল্‌্যাট বিতরণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই না কোন নাগরিক বস্তিতে বসবাস করুক। সুতরাং আমরা বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করছি। মিরপুরে ৫৩৩ টি ফ্ল্যাটের নির্মাণ কাজ চলছে। তাদের জন্য ১৬ হাজারের বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উলল্গাহ্‌ খন্দকার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ভারতীয় হাই কমিশনারের সাক্ষাৎ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ। সোমবার সকালে গণভবনে এ সৌজন্য সাক্ষাতে যান হাই কমিশনার।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সৌজন্য সাক্ষাতে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও ভারতীয় হাই কমিশনার। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে নৌপথের কানেকটিভি বাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সল্ফপ্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে- প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অবশ্যই শুরু করতে হবে। আমরা আর কতদিন এ বোঝা বহন করবো? রোহিঙ্গাদের যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন করা হবে, তা সকলের জন্য হবে মঙ্গলজনক।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি-এনিক বুর্দিন সোমবার বিকেলে গণভবনে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা একথা বলেন। ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। তবে বর্তমানে মিয়ানমারের অবস্থা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার অনুকূল নয়।

শেখ হাসিনা বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে সফলভাবে তার মেয়াদ সম্পন্ন করার জন্য অভিনন্দন জানান এবং দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও কর্মকর্তারা খুবই আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

Pin It