আবেদন পুনর্বিবেচনায় চিঠি দেবে বিএনপি!

image-435065-1624477186

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসায় তার পরিবারের আবেদন পুনর্বিবেচনায় সরকারকে চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। দলের নেতারা মনে করছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে না।

তাই পর্দার আড়ালে এ নিয়ে আলোচনা হতে হবে। সফল হলেই দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও আলোচনায় রয়েছে। তবে আইনি পদক্ষেপ নিতে গেলে সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ডেরও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনিভাবে যাবে কিনা তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সবকিছু খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। সরকারের মনোভাব বুঝে পদক্ষেপ নেবেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

রোববার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। পরিবারের পর এই প্রথমবারের মতো দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হল বৈঠকে। আলোচনায় আসে কীভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএনপি?

দলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদন পুনর্বিবেচনার বিষয়ে শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হতে পারে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন দলটির নেতারা। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের ‘সবুজ’ সংকেত পাওয়ার পর।

এ ব্যাপারে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে দলের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আগে বলিনি। ওনার (খালেদা জিয়া) পরিবার বিদেশে পাঠানোর কথা বলেছিল। আমরা এবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন নিচ্ছি যে, তার বিদেশে চিকিৎসা দরকার। এজন্য যা কিছু করা দরকার, অতি দ্রুত সরকারের তা করা উচিত। তার পরের যে স্টেপগুলো আছে, পরে আলাপ-আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের প্রধান এএফএম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্ত হলেও করোনা-পরবর্তী কয়েকটি জটিলতায় ভুগছেন। তিনি কোনো মতেই ঝুঁকিমুক্ত নন। তার হৃদরোগের সমস্যা আছে। কিডনি ও লিভারের সমস্যা বেশ জটিল।

বিষয়টি চিকিৎসকরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করেছেন যে, তার লিভার ও অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা বিদেশে কোনো উন্নত কেন্দ্রে করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে যার সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম।

বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কারাগার থেকে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির পেছনে দলের কোনো অবদান নেই-এটা সত্য। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতেও পরিবারের তৎপরতা ছিল। সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন তারা।

সিনিয়র নেতারাও এতদিন বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে দলীয় চেয়ারপারসনের পরিবার। কিন্তু খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ততটা ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের ওপর নির্ভর না হয়ে দল থেকেও পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে নেতাকর্মীদের চাপ ছিল। তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভবও নয়। এই দিকটা মাথায় রেখেই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চিকিৎসার বিষয়ে আইনিভাবে যাওয়া খুব কঠিন হবে। আইনগতভাবে তাকে বিদেশে পাঠানো অনেক ঝামেলার বিষয়। সেখানে মেডিকেল থেকে যদি সার্টিফিকেট দেয়, সরকার থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সেখান থেকে যদি মত দেয় এ কারণে তার সুচিকিৎসা দরকার, সেক্ষেত্রে সরকার সদয় হলে তাহলে দিতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।

খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার মতো আপাতত কিছু দেখছি না। কারণ সরকার তাকে নির্বাহী ক্ষমতায় মুক্তি দিয়েছে। যেহেতু সরকার নির্বাহী ক্ষমতায় মুক্তি দিয়েছে, এখন বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে তারাই বিবেচনা করতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা আছে। তা এখন পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছিলেন, বিদেশে চিকিৎসার কথা বলছিলেন। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আবার দাবি জানাল আর কী। নতুন কিছু নয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবউদ্দিন বলেন, প্রতিহিংসাপরায়ণ থেকে সরে এসে অসুস্থ একজন ভদ্রমহিলাকে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার সুযোগ দেবে, সরকার যদি চায় নৈতিকভাবে দেওয়া উচিত।

গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনে সরকার তার দুর্নীতির মামলায় দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত দেওয়া হয়, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসাতেই থাকছিলেন ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়া। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বিদেশে নেওয়ার আবেদন নিয়ে ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে আবেদন নাকচ করে সরকার।

সম্প্রতি আবারও করোনা সংক্রমণ বা অন্য কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে ৫৩ দিন পর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে ভাড়া বাসা ফিরোজায় আনা হয়। সেখানেই তার এখন চিকিৎসা চলছে।

Pin It