গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের রায়বন্দের মুরব্বি মাওলানা উবায়দুল্লাহ খুরশিদ আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার এ প্রথম পর্ব শুরু হয়। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। এতে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা অংশ নিয়েছেন।
এরপর ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। যাতে সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমায় অংশ নেবেন।
ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিতে গত বুধবার বিকাল থেকেই মুসল্লিরা তুরাগ তীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টঙ্গীতে ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল নামে। আুনষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার ইজতেমা শুরু হলেও বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকেই বয়ান ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলে।
বৃহস্পতিবার মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা ফারুক হোসেন। তিনি ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুনের বর্ণনা করেন। শুক্রবার বাদ ফজর থেকে মুসল্লিদের জিকিরে ইজতেমা ময়দান মুখরিত হয়ে ওঠে। সকালেও ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন মুসল্লিরা।
ইজতেমা মাঠের মুরব্বি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান বলেন, ইজতেমায় আজ (শুক্রবার) জুমার নামাজের ইমামতি করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনি জুমাপূর্ব বয়ানও করবেন। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ঢাকা ও এর আশাপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ইজতেমায় জুমার নামাজের জামাতে অংশ নিতে আসতে শুরু করেছেন।
ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। কিন্তু মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেননি। দুপুরের পর থেকে ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিরা ময়দানের পাশের রাস্তা ও ফুটপাতে পলিথিনে সামিয়ানা টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এশার নামাজ পর্যন্ত ইজতেমামুখী মানুষেরে স্রোত অব্যাহত ছিল।
ইজতেমার প্রথম পর্বের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়কারী মুফতী জহির ইবনে মুসলিম জানান, রোববার পর্যন্ত চলবে ধারাবাহিক আমল ও হেদায়েতের বয়ান। বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনে বয়ান করবেন বিশ্ব তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিরা।
কার কখন বয়ান: শুক্রবার জুমার পর বয়ান করবেন শেখ ইউনুস আলী তিউনিসি, আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন রায়বন্দের শায়খ মাওলানা ইহসানুল হক, বাদ মাগরিব আলমি শুরার সদস্য ও তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাট। বিদেশি খিত্তায় বয়ান ইংরেজিতে অনুবাদ করবেন ডক্টর সানাউল্লাহ খান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন আলিগড়ের ডক্টর ফারাহিম। বিশেষ বয়ান বেঙ্গালুরের ভাই ফারুক।
শনিবার বাদ ফজর মুম্বাই মারকাজের মুরব্বি মাওলানা আবদুর রহমান বয়ান করবেন। পরে আলেম-ওলামাদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা ইবরাহীম দেওলা, আরবের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বয়ান মাওলানা আকবর শরীফ, জোহরের পর মাওলানা ইসমাইল গোধরা, বাদ আসর শায়খ মাওলানা জোহায়ারুল হাসান ও বাদ মাগরিব মাওলানা ইবরাহীম দেওলা বয়ান করবেন। এছাড়া শনিবার মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাঠে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা আহমদ লাট।
রোববার বাদ ফজর হেদায়েতি বয়ান করবেন মাওলানা জিয়াউল হক, আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান করবেন মাওলানা ইবরাহীম দেওলা। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিশ্ব মুসলিমের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।
নিরাপত্তা: গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পুরো ইজতেমায় কাজ করবেন জেলা প্রশাসনের ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুসল্লিদের পারাপারের জন্য ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর ৭টি ভাসমান সেতু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করা হবে এবং সব ট্রেনের টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। এবার পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার লোকজন খিত্তা অনুসারে বসবেন।
ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সাত স্তরে কাজ করছেন পুলিশের প্রায় আট হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমার মাঠ ঘিরে থাকছেন র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। পুলিশের নিজস্ব ১৬টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র্যাবের নিজস্ব ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুরো ইজতেমা মাঠের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা।