যেদিন অযোধ্যার রায় বেরোলো, ২০১৯ এর ৯ নভেম্বরে, সেদিনই লিখেছিলাম ”আমি যদি বিচারক হতাম, তাহলে ২.৭৭ একর জমি সরকারকে দিয়ে দিতাম আধুনিক বিজ্ঞান স্কুল বানানোর জন্য, যে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা ফ্রি পড়তে পারবে। আর ৫ একর জমিও সরকারকে দিয়ে দিতাম আধুনিক হাসপাতাল বানানোর জন্য, যে হাসপাতালে রোগীরা বিনে পয়সায় চিকিৎসা পাবে”।
আমার এই মতের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, আগামি ১০০০ বছরে সম্ভব নয় ধর্মীয় উপাসনালয়ের জায়গায় অন্য কিছু নির্মাণ করা। কেউ কেউ বলেছে, স্কুল, একাডেমি, গবেষণাগার, হাসপাতাল, ফুলের বাগান এগুলো বানানোর জায়গার কি অভাব পড়েছে? তা ঠিক, অভাব পড়েনি। তাই ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির হতে যাচ্ছে, আর ৫ একর জমিতে হতে যাচ্ছে মসজিদ। মানুষ প্রার্থনা করবে অলৌকিক ঈশ্বরের কাছে, যে ঈশ্বরের অস্তিত্বের আজও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উত্তর-ইউরোপের গির্জাগুলো দেখলে চমকিত হই। খালি পড়ে থাকে বছর ভর। রোববারে হাতে গোণা কয়েকজন আসে কী আসে না। গির্জা চলে পযটকদের জন্য। ওরাই শিল্প স্থাপত্য দেখতে আসে। উপাসনালয়গুলো ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে জাদুঘরে। আমাদের অঞ্চলের উপাসনালয়গুলোয় হয়তো একদিন ভিড় কমতে থাকবে। মানুষ ব্যস্ত থাকবে মানুষের সেবায়। সেবাই তো সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপাসনা।
-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে