বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান কলকাতায় কালীপূজা উদ্বোধন করেছেন, এমন খবরে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। অনেকেই বলছেন, একজন মুসলিম হিসেবে এটা তার উচিৎ হয়নি।
সাকিবকে ফেসবুক লাইভে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সোমবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ইউটিউবে সাকিব জানিয়েছেন, তিনি কালীপূজা উদ্বোধন করেননি। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে তিনি সেটা কখনই করবেন না।
সাকিব বলেন, ‘ঘটনাটি খুব সেন্সেটিভ। প্রথমেই বলতে চাই, আমি নিজেকে গর্বিত মুসলমান মনে করি। আমি সেটাই চেষ্টা করি পালন করার। ভুল ত্রুটি হবেই। আসলে ভুলত্রুটি নিয়েই আমরা জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনাদের মনে কষ্ট দিলেও ক্ষমা প্রার্থনা করছি। পূজার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া এবং সোশ্যাল সাইটে এসেছে যে, আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। আসলে কখনই যাইওনি এবং করিওনি। এটার প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। ‘
সাকিব প্রমাণ দিয়ে বলেন, ‘সেখানে অনেক সাংবাদিক ভাই-বোনেরাই ছিলেন। যাদেরকে ইনভাইট করা হয়েছে। তাছাড়া আপনারা যদি সেখানকার ইনভাইটেশন কার্ডটাও দেখেন, তাহলে বুঝবেন কে পূজা উদ্বোধন করেছে। কার্ডে নামও লেখা আছে। এটি উদ্বোধন হয়েছে আমি যাওয়ার আগে। আর যেখানে আমাদের অনুষ্ঠানটি হয়েছে, সেটা পূজামণ্ডপ ছিল না। সেটা আলাদা একটা স্টেজ ছিল। পুরো অনুষ্ঠানটিই সেখানে হয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিটব্যাপী সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। সেখানে কোনো ধর্ম-বর্ণ কোনোকিছু নিয়ে কথা হয়নি। ‘
সাকিব আরও বলেন, ‘অনুষ্ঠান শেষে যখন গাড়িতে উঠতে হবে, যেহেতু ওখানে পাশেই পূজার আয়োজন ছিল। আশেপাশে অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ ছিল। যেহেতু আমাকে গাড়িতে উঠতে হবে, তাই ওই মণ্ডপটি ক্রস করে আমাকে যেতে হতো। এবং আমি গিয়েছি। যাওয়ার সময় পরেশদা, যিনি আমাকে ইনভাইট করেছিলেন, তার অনুরোধে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করি। যেহেতু কলকাতায় আমি অনেকদিন খেলেছি, কলকাতার মানুষ আমাকে অনেক পছন্দ করে। সেখানকার সাংবাদিকরও উৎসুক ছিলেন; সবার রিকোয়েস্টে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সময় সবাই দাঁড়িয়ে একটি ছবি তোলা হয়। ‘
সাকিব বলেন, ‘ছবি তুলে যাওয়ার সময় আসলে সাংবাদিকদের সঙ্গে যারা নিরাপত্তাকর্মী ছিল, তাদের একটু বাকবিতণ্ডাও হয়; হাতাহাতিও হয়। সেই ঘটনার কারণে আমরা ওইদিক দিয়ে যেতে পারিনি। অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। আসলে পুরো ঘটনাটা ছিল এরকম। যার ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আমাদের যে প্রোগ্রামের জন্য স্টেজ করা হয়েছিল, সেখানে ছিলাম। আমি আবারও বলছি, সেখানে কোনো ধর্ম বর্ণ নিয়ে কথা হয়নি। প্রোগ্রামের আয়োজন সেরকম ছিল না। যেটি হয়েছে যে দুই মিনিট আমি যে পূজামণ্ডপে ছিলাম, সেটি নিয়ে সবাই বলেছে। তারা ধারণা করছে যে আমি পূজার উদ্বোধন করেছি। ‘
সাকিব বলেন, ‘এটি আমি কখনই করিনি। সচেতন মুসলমান হিসেবে তা কখনই করব না। তারপরেও হয়তো সেখানে যাওয়াটাই আমার ঠিক হয়নি। এমনটা যদি আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মনে করি যে, আপনারা অবশ্যই এটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং ভবিষ্যতে আমি এরকম কোনো ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটিরও চেষ্টা করব। তবুও আপনাদের কাছে ক্লিয়ার করতে আমি বলে দেই কে সেখানে উদ্বোধক ছিলেন। আমার হাতে ইনভাইটেশন কার্ড আছে; এখানে উদ্বোধক ছিলেন ফিরহাদ হাকিম; প্রশাসনিক প্রধান, কলকাতা পৌরসভা, মন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ‘
সাকিব বলেন, ‘আমি সেখানে যাবার আগেই তিনি (ফিরহাদ হাকিম) পূজার উদ্বোধন করে গিয়েছেন। তারপরে আমি গিয়েছি। প্রোগ্রাম এটেন্ড করেছি। পরেশদার রিকোয়েস্টে এক মিনিটে আমি প্রদীপটি প্রজ্জ্বলন করেছি এবং সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছি। আপনারা ব্যাকগ্রাউন্ডটা নিয়েই হয়তো বেশি উত্তেজনা বোধ করছেন। আসলে একটা ছবি দেখে আপনি পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে অনুমান করতে পারবেন না বলে আমার মনে হয়। আবারও বলছি, কখনই আমার ইনটেনশন ছিল না যে আমার ধর্মকে ছোট করে অন্য ধর্মকে বড় করব কিংবা অন্য কোনো ইস্যুই ছিল না। আমি মনে করি ইসলাম শান্তির ধর্ম। যদিও আমার জ্ঞান খুবই কম; আমি চেষ্টা করছি এবং ভবিষ্যতেও চেষ্টা করব যাতে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নেওয়া যায়। ইসলামের নিয়মানুযায়ী যেন আমি চলতে পারি। হ্যাঁ, সবসময় হয়তো চলতে পারি না। তবে চেষ্টা করি। আমার কোনো ইনটেনশন নেই যে ভবিষ্যতে এটা করতে পারব না। ‘
সাকিব বলেন, ‘আমরা এমন কিছু না করি, যাতে মানুষ আমাদের দ্বিধায় ফেলে দেয় যে, আমরা কি আসলে এক নাকি আলাদা। কারণ আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এক থাকব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা শক্তিশালী। আমি অনেক উদাহরণ দিতে পারি; কিন্তু দিতে চাই না। আমরা যারা মুসলমান আছি, আমাদের এক থাকা জরুরি। যখনই আমরা আলাদা হয়ে যাব, তখন আমরা দুর্বল। যখনই আমরা এক হবে তখনই আমরা স্ট্রং। যদি কেউ আমাকে ভালো কিছু জানাতে চান, সাদরে আমন্ত্রণ জানাব। সোশ্যাল সাইটে অনেকে আমার নামের পাশে “শ্রী শ্রী” “সিঁদুর” “প্রদীপ” ইত্যাদি লাগিয়ে অনেককিছু বলছেন। আসলে এতে আমরা ইসলামের বা আমাদের ধর্মের কতটা উপরে নিচ্ছি বা নিচে নিচ্ছি তা আমার বোধগম্য নয়। আমি আবারও ক্ষমা চাইছি। ‘