বলসংখ্যা ৩০০। রান করতে হবে মাত্র ১০৭। তাহলেই যুবারা এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন। কাগজে-কলমে লক্ষ্যটা মোটেও কঠিন হওয়ার কথা না। কিন্তু সহজ এ লক্ষ্যটাই ভীষণ কঠিন করে জিততে জিততে হারল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। কলম্বোয় আজ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের কাছে ৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশের যুবারা। এ হারে অবদান রয়েছে আম্পায়ারেরও।
হাতে ২ উইকেট রেখে জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে আম্পায়ারের ভুল এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের খেসারত গুণে আউট হন তানজীম (৩৫ বলে ১২)। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে আনকোলেকারের বলটি তার ব্যাটে লেগেছিল। এমনকি টিভিতেই বল ব্যাটে লাগার শব্দ শোনা গেছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। মাঝে দুই বল পর শেষ উইকেট তুলে নেন আনকোলেকার। ১০১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৯ দল।
এর মধ্য দিয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালে উঠেই বাংলাদেশের যুবাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটল। বাংলাদেশের ইনিংসে ম্যাচের ভাগ্য দুলেছে পেন্ডুলামের মতো। ভারত এখন এগিয়ে তো তখন বাংলাদেশ! কিন্তু ৭৮ রান তুলতে ৮ উইকেট হারানোর পর নয়ে নামা তানজীম হাসান ও দশে নামা রাকিবুল হাসানের দৃঢ়তায় জয় দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে অপমৃত্যুই ঘটল সে স্বপ্নের।
তবে খুব অল্প এ রান তাড়া করতে নেমে যুবাদের শুরুটা হয়েছিল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিংয়ের মতোই। ১০ রান তোলার আগেই টপ অর্ডার হারিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশের যুবারা প্রথম ৩ উইকেট হারিয়েছে দলীয় ১৩ রানের মধ্যে। প্রথম ওভারেই ফিরে যান ওপেনার তানজীদ হাসান (০)। পরের ওভারে আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেনকে (৫) তুলে নেন পেসার বিদ্যাধর পাতিল। চারে নামা তৌহিদ হৃদয় এসেও ফিরেছেন পরের ওভারেই। অর্থাৎ প্রথম তিন ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই ছিটকে পড়ার পথে ছিল যুবারা।
এ সময় বোলিংয়ে স্রেফ আগুন ঝরিয়েছেন ভারতীয় যুবাদের বাঁ হাতি পেসার আকাশ সিং। ওপেনার তানজীদকে তুলে নেওয়ার পর পঞ্চম ওভারে মাহমুদুল হাসানকেও ফেরান তিনি। ৪ উইকেটে ১৬ রান থেকে দলীয় ৫০ রান তোলার আগেই আরও একটি উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১১তম ওভারে স্পিনার অথর্ব আনকোলেকারের শিকার হন শাহাদত হোসেন। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের স্কোর যথাক্রমে সাজালে মনে হবে মুঠোফোনের নম্বর—০, ৫, ১, ০ ৩!
ম্যাচের এমন পরিস্থিতিতে কাউকে না কাউকে কাল ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফিফ হোসেনের মতো হয়ে উঠতে হতো। বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ নেমে ম্যাচ জেতানো কী ইনিংসটাই না খেললেন! আজ আফিফের মতো হয়ে ওঠার দায়িত্বটা ভাগ করে নেন অধিনায়ক আকবর আলী ও পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তবে আফিফের মতো দুর্দান্ত স্ট্রোক খেলে নয়, ধৈর্য ও দৃঢ়তা দেখিয়ে উইকেটে পড়ে ছিলেন দুজন। কারণ পর্যাপ্ত ওভার থাকায় কত বল বাকি, সে চিন্তা তাদের না করলেও চলত। শুধু উইকেট পড়তে দেওয়া যাবে না।
সপ্তম উইকেটে এমন দুজন দৃঢ়তা দেখিয়ে ৩২ বলে ২৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের পথে। ১৯.৪ ওভারে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৭৭। জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ৩০ রান। এ অবস্থায় প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃষ্টি নামায় কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল খেলা। বৃষ্টি থামলে খেলা পুনরায় শুরুর পর সবচেয়ে বড় আঘাতটা পায় যুবারা।
৩৬ বলে ২৩ রান করে আনকোলেকারকে ফিরতি ক্যাচ দেন আকবার। আবারও ভীষণভাবে জমে ওঠে ম্যাচ। হাতে ৩ উইকেট, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে শুধু টিকে থাকতে হবে। অন্যদিকে যত দ্রুত সম্ভব উইকেট চাই ভারতীয় যুবাদের। এ অবস্থায় ‘আত্মহত্যা’ই করে বসেন মৃত্যুঞ্জয়। ২২তম ওভারের প্রথম বলে সুশান্ত মিশ্রকে অনর্থক মারতে গিয়ে উইকেট দেন তিনি। ২৬ বলে তার ২১ রানের ইনিংসটি আক্ষেপই বাড়িয়েছে। ২১.১ ওভারে ৭৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। জয়ের জন্য তখনো দরকার ২৯ রান।
আকাশে মেঘ জমে থাকায় তখন আরও এক বিপদ চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। আবারও বৃষ্টি নামলে হার-জিত নির্ধারণ হতো ডি/এল নিয়মে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর থাকতে হতো ৯৩। দলীয় ৯০ রান থেকে আরও ৩ রান যোগ করতে প্রায় তিন ওভারের মতো খেলেছেন নয়ে নামা তানজীম হাসান ও দশে নামা রাকিবুল হাসান। এ সময় কৌশল করে পেসারদের ব্যবহার করেছেন ভারতের অধিনায়ক। বল করতে সময় একটু বেশি নেওয়ার জন্য, কারণ এর মধ্যে বৃষ্টি নামলে জিতে যেত ভারতের যুবারা। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই ঘটেনি। তবে যা ঘটেছে সেটি বাংলাদেশের যুবাদের হৃদয় পোড়াতে যথেষ্ট। আম্পায়ার ভুল সিদ্ধান্ত না দিলে দল হয়তো জিতেই যেত—অনূর্ধ্ব-১৯ দল কিন্তু এমন ভাবতেই পারে।
২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ভারতের স্পিনার অথর্ব আনকোলেকার। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো শিরোপা জিতল ভারতের যুবারা।