আরও ৩টি ব্যাংক অনুমোদন

নতুন সরকারের শুরুতেই অনুমোদন পেল তিনটি ব্যাংক, এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা ৬২তে উন্নীত হতে যাচ্ছে।

BangladeshBank_042016_0009

এগুলো হচ্ছে বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক। তিনটি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

বেঙ্গল ব্যাংকের উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রস্তাবিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হলেন তার ছোট ভাই জসীম উদ্দিন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হকের নাম সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। পিপলস ব্যাংকটির আবেদনে প্রস্তাবিত চেয়ারম্যান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম।

রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন তিনটি ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরুর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাসের  সাংবাদিকদের বলেন, “বোর্ডসভায় সর্বসম্মতিক্রমে তিনটি ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“তবে তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল (পরিশোধিত মূলধন) ৫০০ কোটি টাকা হতে হবে। এটিসহ প্রয়োজনীয় আরও শর্ত পূরণের পর তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গত সরকারের শেষ দিকে এই তিনটিসহ চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের আবেদন জমা পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

তবে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট (বিপিডব্লিউটি) এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ব্যাংক শুধু অনুমোদন পেয়েছিল।

গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও বাকি তিনটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাবটি স্থগিত রেখেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

তখন অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছিল, বেঙ্গল ব্যাংকের আবেদনে যে পরিচালকদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে করসংক্রান্ত মামলা রয়েছে। পিপলস ব্যাংকের কাশেমের যুক্তরাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদের হিসাব যথাযথ মনে হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। আর সিটিজেন ব্যাংকের প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকার কথা জানানো হয়েছিল।

বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক মিলিয়ে এতদিন ৫৯টি ছিল, নতুন তিনটি যোগ হলে এই সংখ্যা ৬২টি হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের তার আগের মেয়াদে ২০১২ সালে নয়টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া নিয়ে সে সময় সমালোচনা হয়েছিল।

ঋণ কেলেঙ্কারির কয়েকটি বড় ঘটনায় গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাত আলোচনায় রয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি ব্যাংকও অনিয়ম আর তারল্য সঙ্কটে ধুকছে।

গত জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার (রাইটঅফসহ) মতো, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১৫ শতাংশ।

এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়ে দেশে অর্থনীতিবিদদের যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারকে।

অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা নতুন ব্যাংকের বিষয়ে বরাবরই বিরোধিতা করে বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থায় দেশে আর ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।

তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এ পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া কোনোভাবেই উচিৎ হবে না।

কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ক্রমাগত চাপ ছিল নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ায়।

যদিও গত সেপ্টেম্বরেই মুহিত বলেছিলেন, “দেশের ব্যাংক খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে। তাই এ খাত সংকোচনের দরকার হতে পারে।”

Pin It