ইংল্যান্ডের চার ব্যাটসম্যানের ফিফটির পরও লক্ষ্যটা দক্ষিণ আফ্রিকার নাগালে ছিল। দারুণ বোলিংয়ে গতিময় পেসার জফরা আর্চার সেটা নিয়ে গেলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বড় জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল ওয়েন মর্গ্যানের দল।
জিততে বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর্চারের গতিময় বোলিংয়ে যেতে পারেনি এর ধারে কাছে। টপ অর্ডারে ছোবল দিয়ে সুর বেঁধে দেন এই পেসার। পরে বোলিংয়ে ফিরে থামান প্রতিপক্ষের আশা হয়ে টিকে থাকা রাসি ফন ডার ডাসেনকে।
কেনিংটন ওভালে বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ১০৪ রানে জিতেছে স্বাগতিকরা। ৩১১ রান তাড়ায় ৩৯ ওভার ৫ বলে ২০৭ রানে গুটিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। বিশ্বকাপে রানের দিক থেকে প্রোটিয়াদের এর চেয়ে বড় আছে কেবল একটি।
ইংল্যান্ডের হয়ে ফিফটি করেন বেন স্টোকস, ওয়েন মর্গ্যান, জেসন রয় ও জো রুট। দুটি শতরানের জুটিতে ভর করে গড়ে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তাদের আগের সেরা ছিল ৬ উইকেটে ২৫২, ১৯৯২ আসরে।
চমক দিয়ে শুরু হয় ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের পেস আক্রমণ। তবে প্রথম ওভারে অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি বল তুলে দেন ইমরান তাহিরের হাতে। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসের প্রথম ওভারে বোলিং করা এই লেগ স্পিনার শুরুতেই ফিরিয়ে দেন জনি বেয়ারস্টোকে।
বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের প্রথম শতরানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন রয় ও রুট। তবে সম্ভাবনাময় ইনিংসকে পূর্ণতা দিতে পারেননি তারা।
অষ্টাদশ ওভারে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন দুই ব্যাটসম্যান। পরের দুই ওভারে রুট-রয়কে ফিরিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫৩ বলে ৮ চারে ৫৪ রান করা রয়কে থামিয়ে ১০৬ রানের জুটি ভাঙেন আন্দিলে ফেলুকোয়ায়ো। ৫৯ বলে ৫১ রান করা রুটকে বিদায় করেন কাগিসো রাবাদা।
চার বলের মধ্যে দুই থিতু ব্যাটসম্যানকে হারানো ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় মর্গ্যান ও স্টোকসের জুটিতে। ক্রিজে গিয়েই বোলারদের ওপর চড়াও হন মর্গ্যান, একটু সময় নেন স্টোকস। দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জুটি জমে যাওয়ার পর রান এসেছে দ্রুত।
৫০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মর্গ্যান। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে রিভার্স স্কুপে চার হাঁকিয়ে ৪৫ বলে ফিফটি তুলে নেন স্টোকস। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন তাহির। লং অনে মর্গ্যানের চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় নেন এইডেন মারক্রাম। ৬০ বলে ৫৭ রান করে ফিরেন ইংলিশ অধিনায়ক। ভাঙে ১০৬ রানের জুটি।
রানের গতিতে দম দিতে ইংল্যান্ড তাকিয়ে ছিল জস বাটলারের দিকে। লুঙ্গি এনগিডির বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়ে ফিরেন এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। মইন আলিকে দ্রুত ফেরান এনগিডি।
১৯৯২ আসরের সেমি-ফাইনালে গ্রায়েম হিকের ৮৩ ছিল এতোদিন বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের কারও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। তা ছাড়িয়ে ৮৯ রানে থামেন স্টোকস। তার ৭৯ বলের দায়িত্বশীল ইনিংসে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড।
বারবার বোলিংয়ে পরিবর্তন এনে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ভাবনার মধ্যে রাখেন দু প্লেসি। দলের ফিল্ডিং ছিল দারুণ। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে বাঁচিয়েছেন কিছু রান, কয়েকটি ভালো ক্যাচও মুঠোয় নিয়েছেন তারা। ব্যাটিং ততটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। তার মাশুল দিতে হলো বড় ব্যবধানে হেরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্ম নেওয়া আর্চারকে নিয়ে বিশ্বকাপ দল চূড়ান্ত করার আগে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে ছিল তুমুল আলোচনা। কেন তাকে নিয়ে এতো আগ্রহ সেটা প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিলেন ২৪ বছর বয়সী পেসার।
তার গতিময় বাউন্সার ছোবল দেয় হাশিম আমলার হেলমেটের গ্রিলে। চতুর্থ ওভারে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ ওপেনার। পরে এইডেন মারক্রাম ও দু প্লেসিকে দ্রুত ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলে দেন আর্চার।
আদিল রশিদের বল কুইন্টন ডি ককের ব্যাট ছুঁয়ে স্টাম্পে লাগলেও পড়েনি বেল। মইনের বলে ৬ রানে বাটলারকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ফন ডার ডাসেন। ভাগ্যকে পাশে পাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের ৮৫ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দলকে পথ দেখানো ডি কক ফিরেন বাজে এক শটে। ৭৪ বলে ৬ চার ও দুই ছক্কায় ৬৮ রান করে ধরা পড়েন রুটের হাতে। এরপর আর তেমন কোনো জুটি পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ৬১ বলে ৫০ রান করা ফন ডার ডাসেনকে থামান আর্চার।
ফন ডার ডাসেন ফেরার পর মাঠে ফিরেছিলেন আমলা। তবে বেশিক্ষণ টিকেননি তিনি। শেষের দিকে বোলিংয়ে আসা স্টোকস পরপর দুই বলে রাবাদা ও তাহিরকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে এনে দেন শতরানের জয়।
দুই স্পেলে ৭ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন আর্চার। দুটি করে উইকেট নেন স্টোকস ও প্লানকেট।
ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে নিজেকে মেলে ধরে উদ্বোধনী ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন অলরাউন্ডার স্টোকস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩১১/৮ (রয় ৫৪, বেয়ারস্টো ০, রুট ৫১, মর্গ্যান ৫৭, স্টোকস ৮৯, বাটলার ১৮, মইন ৩, ওকস ১৩, প্লানকেট ৯*, আর্চার ৭*; তাহির ১০-০-৬১-২, এনগিডি ১০-০-৬৬-৩, রাবাদা ১০-০-৬৬-২, প্রিটোরিয়াস ৭-০-৪২-০, ফেলুকোয়ায়ো ৮-০-৪৪-১, দুমিনি ২-০-১৪-০, মারক্রাম ৩-০-১৬-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ (ডি কক ৫৮, আমলা ১১, মারক্রাম ১১, দু প্লেসি ৫, ফন ডার ডাসেন ৫০, দুমিনি ৮, প্রিটোরিয়াস ১, ফেলুকোয়ায়ো ২৪, রাবাদা ১১, এনগিডি ৬, তাহির ০*; ওকস ৫-০২৪-০, আর্চার ৭-১-২৭-৩, রশিদ ৮-০-৩৫-১, মইন ১০-০-৬৩-১, প্লানকেট ৭-০-৩৭-২, স্টোকস ২.৫-০-১২-২)
ফল: ইংল্যান্ড ১০৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: বেন স্টোকস