ওয়াদা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা বলেছেন, এই দিন আলোর পথে যাত্রার সফলতার সেই দিন।
সোমবার পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে রেখে গিয়েছিলেন, আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ওয়াদা করেছিলাম, প্রতিটি মানুষের ঘর আলোকিত করব। প্রতিটি মানুষ আলোকিত হবে। আলোর পথে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। আজকের দিনটা… সেই আলোর পথে যাত্রা শুরু যে সফল হয়েছে, সেই দিন।”
ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। কোভিড মহামারী শুরুর পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাইরে দেশের অন্য কোথাও এটিই তার প্রথম সফর।
কলাপাড়ায় পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুলিশ সদস্যরা গার্ড অব অনার দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোল জেটিতে যান। রাবনাবাদ নদীর কয়লা জেটিতে রঙিন পাল তোলা ২০০ নৌকা থেকে পতাকা উড়িয়ে এবং গানের সুরে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন এবং মঞ্চে এসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নাম ফলক উন্মোচন করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতার স্মারক হিসেবে ১৩২০টি পায়রা এবং বেলুন ওড়ানো হয় এ সময়।
বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের পর সেখানে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং আগামীতে রোজা ও ঈদ; এই রোজা, ঈদ- সবকিছু সামনে রেখে এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র আপনাদেরকে উপহার দিয়ে গেলাম।”
২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সরকার পরিচালনার ব্যাপ্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা ‘ভোট দিয়ে’ নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশে ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকার কারণেই’ বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটতে পারছে।
“ভোট দিয়ে আমাদেরকে তারা নির্বাচিত করেছেন। এই ১৩ বছর একটানা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অব্যাহত রয়েছে। এর মাঝে ঝড়ঝাপটা অনেক এসেছে। কিন্তু সেগুলো আমরা অতিক্রম করেছি। অতিক্রম করেও আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে।”
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে দেশে একশ স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল কথার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই এই দেশ এগিয়ে যাক। আজকে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলেছি। দক্ষিণাঞ্চল সবসময় অবহেলিত। রাস্তাঘাট পুল-ব্রিজ ব্যাপকভাবে করে দিয়েছি। একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল সারা বাংলাদেশে করে দিচ্ছি, যাতে করে সেখানে কর্মসংস্থান হয়।”
পটুয়াখালীর পায়রার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সোমবার তা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। উদ্বোধনের পর তা ঘুরেও দেখেন তিনি। ছবি: পিআইডি
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল সেন্টার তৈরি করে দিয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সবদিকেই আমরা ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে আওয়ামী লীগ সরকার ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।দেশের দক্ষিণাঞ্চল যে এক সময় অবহেলিত ছিল, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও তিনি বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “যে সমস্ত এলাকায় একসময় ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে পানি এদিক থেকে ওদিকে বয়ে যেত, মানুষের একটা মাত্র ফসল, তাও নষ্ট হলে দুর্ভিক্ষে পড়তে হতো… আল্লাহর রহমতে আর সেই দুর্ভিক্ষ হবে না। আর সেই মানুষের কষ্ট থাকবে না।
“আজকে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, উন্নত জীবন পাবে। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সোমবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। ছবি: পিআইডি
যুব সমাজের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “লেখাপড়া শিখে নিজেরাও উদ্যোক্তা হতে পারবে। নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে নিজেরাই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। আরও দশটা মানুষের চাকরি দিতে পারবে। সেইভাবে যুব সমাজকে চিন্তা করতে হবে…। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে।”
পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুন্দর ও উন্নত জীবন পায়, সেজন্যই আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার বাবা মহৎ কাজ করে যাচ্ছিলেন, আর মহৎ কাজের জন্য মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগ প্রয়োজন। এটাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা।
“সেই কথাটা স্মরণ রেখেই- যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, মা জীবন জীবন দিয়ে গেছেন, ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে; আমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করে এই বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমি মনে করি মুজিব আদর্শের প্রতিটি সৈনিকের সেটাই স্মরণ রাখতে হবে।”
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইনশাল্লাহ আর সেই নাম কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। খুনি আর ওই যুদ্ধাপরাধীরা আর কখনও এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।“মানুষ নিজেই আজকে জেগেছে, উঠে দাঁড়িয়েছে এবং এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাব আমরা ভবিষ্যতের দিকে।”
আরও পথ পাড়ি দেওয়া যে বাকি আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “ইনশাল্লাহ এই চলার গতি আর কেউ থামাতে পারবে না।”