দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস পেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলন কর্মসূচি তুলে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর পাটকল শ্রমিক নেতারা চলমান আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন বলে রাতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈকত চন্দ্র হালদার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মজুরি স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয় এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মজুরি স্লিপ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
এরপর রাতে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন এক আদেশে জানায়, শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী মজুরি স্লিপ দেওয়া হবে।
ঢাকার সিদ্ধান্ত জেনে খুলনায় অনশনরত পাটকল শ্রমিকরা রাতে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। রাজশাহীর শ্রমিকরাও আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেণ।
মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা গত ২৩ নভেম্বর থেকে সভা, বিক্ষোভ মিছিলসহ ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ, নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আব্দুল হামিদ তাদের কর্মসূচি ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় খুলনা, রাজশাহী ও নরসিংদীর অন্তত ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ২৯ ডিসেম্বর ফের আমরণ অনশনে বসেন।
পাটকলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির সিদ্ধান্ত বাতিল, কাঁচা পাট কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করার দাবিও রয়েছে তাদের ১১ দফার মধ্যে।
২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পাট খাতকে লাভজনক করার অঙ্গীকার করে। তারা ক্ষমতায় আসার পর বিজেএমসিকে লাভজনক করতে কর্মপরিকল্পনা করে।
২০০৯ সালে পাটকল বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। এরপর বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া বিভিন্ন পাটকল সরকারের হাতে নিয়ে নতুন করে চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন ২৬টি পাটকলের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি নন-জুট। মিলস ফার্নিশিংস লিমিটেড নামের নন-জুট কারখানা ছাড়া বাকি ২৪ প্রতিষ্ঠান লোকসানে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমসির পাটকলগুলোর (জুট ও নন-জুট) লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৮১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো ভালো করছে, তাদের রপ্তানি আয়ও বেড়েছে। কিন্তু সরকারের হাতে থাকা ২২টি পাটকলের সবগুলোয় লোকসান হওয়ায় প্রতিবছরই সরকারি টাকা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে বলে বিজিএমসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া খুলনার খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী জুট মিলস ও ফোরাম কার্পেটস ফ্যাক্টরি সরকারের হাতে ফিরিয়ে এনে চালু করা হলেও লোকসান পাল্লা কেবলই ভারী হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ- ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেন বিজেএমসিকে দুষে বলছেন, “বিজেএমসি সময়ের পাট অসময়ে কিনতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দেয়। পরে দোষ দেয় সব শ্রমিকের। অন্যদিকে বিপণন বিভাগের অদক্ষতার কারণে পাটপণ্যের দাম পাওয়া যায় কম। ফলে পণ্য পড়ে থাকে আর মিলকে লোকসান গুণতে হয়।”