ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে নাগরিকদের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর শনিবার ভোর থেকেই সিলেটের সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তালিকায় বাদপড়াদের কেউ যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকার পুলিশকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার আসামের বহুল আলোচিত নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি থেকে বাদ পড়েন রাজ্যের ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। ফলে ভারতে অবস্থানরত এই নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বেশ কয়েক দিন ধরে এই লোকদের ‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিহিত করে আসছেন। এখন যে কোনো সময় তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। তাই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিজিবি সদস্যদের। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বসবাসকারী লোকজনকে বিজিবির পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সিলেট বিভাগের চার জেলার সব দিক ঘিরে রেখেছে ভারত। বিশেষ করে সিলেটের ১৩ উপজেলার মধ্যে সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার এবং মৌলভীবাজারের বেশ কিছু অংশ আসামের খুব কাছাকাছি। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা মেঘালয় রাজ্যের কাছাকাছি হলেও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এসব এলাকার লোকদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জকিগঞ্জের সীমান্তবর্তী মানিকপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আসামের সঙ্গে সিলেটের জকিগঞ্জের দূরত্ব সুরমা নদীর এপার-ওপার। তাই বিজিবি থেকে তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে বাহবা পেলেও সেখানের স্থানীয়রা ভালো নেই। একই দুশ্চিন্তা আমাদের মধ্যেও ভর করেছে। ঠিক একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন উপজেলার কসকনপুর এলাকার হাসান মিয়া।
বিজিবির ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আসামের পরিস্থিতির যদি কোনো সময় অবনতি হয়, সেদিকেও আমাদের নজরদারি আছে।
তিনি বলেন, সীমন্ত পথ কিংবা অন্য কোনো অবৈধ পথ দিয়ে কোনো ভারতীয় নাগরিককে পুশইন করার চেষ্টা হলে তা মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বিজিবির। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় এদেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের কোনো তৎপরতা দেখার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পে খবর দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ। এ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কারণ দেখছি না। আসামের ব্যাপারে আলাদা কোনো নির্দেশনা নেই। তার পরও আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সব সময় সতর্ক আছি।
সিলেটের সীমাবর্তী জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবু নাসের বলেন, আসামের বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময়ই থাকে। কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে।