আসুন রমজানে আমল ও সৎকাজের প্রতিযোগিতা করি

image-786839-1710881981

জীবনের পরিক্রমায় আমরা আবারও উপনীত হয়েছি পবিত্র মাহে রমজানে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ যে আমাদের আরও একটি রমজানে ইবাদত-বন্দেগির তওফিক দান করেছেন। এজন্য আমাদের উচিত এ সুযোগকে লুফে নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ও আমলে সালেহায় ব্যাপৃত হওয়া। এ মাসে প্রতিটি মুহূর্তকে পরম সৌভাগ্য মনে করে সৎকাজের প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়া।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কল্যাণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা বাকারা : ১৪৮)। অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সে জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও, যে জন্নাতের বিস্তৃতি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর মতো; যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৩৩)।

আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে দান-সদকা, সাহায্য-সহযোগিতায় উদার হাতে এগিয়ে আসতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারাই সেসব লোক, যারা কল্যাণকর কাজগুলোয় তাড়াতাড়ি করে এবং এ ধরনের কাজে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করে।’ (সুরা মুমিনুন : ৬১)।

গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের বেশি বেশি দান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো তোমাদের প্রত্যেকের জন্য শরিয়ত ও মিনহাজ নির্ধারণ করে দিয়েছি। আল্লাহ চাইলে তোমাদের এক জাতি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরীক্ষা করতে চান। কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতা কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকেই ফিরতে হবে।’ (সুরা মায়িদা : ৪৮)।

কুরআনে অন্যত্র বলেন, ‘স্মরণ করুন জাকারিয়ার কথা, যখন তিনি তার প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে নিঃসন্তান রাখবেন না। আর আপনি হলেন সর্বোত্তম উত্তরাধিকারের অধিকারী। আমি জাকারিয়ার প্রার্থনা কবুল করেছিলাম, ইয়াহইয়াকে তার পুত্র হিসাবে দান করেছিলাম এবং এজন্য জাকারিয়ার স্ত্রীকে সন্তান জন্মদানের যোগ্য করে তুলেছিলাম। তারা ভালো কাজে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভয়ের সঙ্গে এবং তারা আমার কাছে অত্যন্ত বিনয়ী ছিল।’ (সুরা আম্বিয়া : ৮৯-৯০)।

সুরা ফাতিরে আল্লাহ বলেন, ‘এরপর আমি কিতাবের উত্তরাধিকারী করলাম তাদের, যাদের আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে কিতাবের জন্য মনোনীত করেছিলাম। তাদের কেউ কেউ তাদের নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে, কেউ কেউ মধ্যম পথ গ্রহণ করেছে। আর কেউ কেউ ভালো কাজে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী হয়েছে। বস্তুত এটা হলো মহা অনুগ্রহ।’ (সুরা ফাতির : ৩২)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত লাভের জন্য এগিয়ে যাও, যে জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান, যে জান্নাত সৃষ্টি করা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান আনে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তিনি যাকে ইচ্ছা এই অনুগ্রহ দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।’ (সুরা হাদিদ : ২১)।
আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় পুণ্যবান লোকেরা নিয়ামতের মধ্যে থাকবেন। তারা সুসজ্জিত আসনে বসে দেখবেন। আপনি তাদের মুখমণ্ডলে নিয়ামতের জ্যোতি দেখতে পাবেন। তাদের সিলমোহরকৃত বিশুদ্ধ পানীয় পান করতে দেওয়া হবে। ওই পানীয়ের সিলমোহর হবে কস্তুরির। আর এমন জিনিসের জন্যই প্রতিযোগিতা করা উচিত।’ (সুরা মুতাফফিফিন : ২২-২৬)।

প্রত্যেক মুসলিম আমলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন। আমল এবং আল্লাহর ভয় মানুষকে পরকালে মুক্তি দেবে এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে। মানুষ যেসব আমল করে থাকে এর মধ্যে আল্লাহতায়ালার কাছে সব থেকে প্রিয় হলো নিয়মিত যে আমল করা হয়। হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য ওই আমলের মতোই (সওয়াব) লেখা হয়, যা সে ঘরে থেকে সুস্থ শরীরে আমল করত।’ (বোখারি)।

হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যখন কোনো মানুষের অভ্যাস হয়ে যায় যে, সে সুস্থ ও অবসর অবস্থায় কোনো নেক আমলের অভ্যাস করে নেয়, এরপর সে অসুস্থ হয়ে যায় এবং অসুস্থতার কারণে এখন আর সে আগের সেই নেক আমলটি করতে পারছে না, তখন তার জন্য ওই আমলের পুরো সওয়াব লেখা হবে, যেমন সে সুস্থ অবস্থায় আমলটা করলে লেখা হতো। একইভাবে অসুস্থতা ছাড়াও যদি তার আমলের ক্ষেত্রে অন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলেও সে সওয়াব পাবে। যেমন, কোনো প্রয়োজনে কোথাও সফরে বের হলো অথবা মেয়েদের হায়েজ বা এ জাতীয় কোনো সমস্যা দেখা দিল এবং এ কারণে সে আর আমলটি আগের মতো করতে পারল না, তাহলে তার জন্য তখনো পুরো সওয়াব লেখা হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি নেক আমল করার তওফিক দান করুন। অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন। নেক আমলের পুরস্কার সুনিশ্চিত জান্নাত পাওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।

Pin It