আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন কোন যোগ্যতা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঠিক করা হবে জানতে চাইলে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, যোগ্যতা খুব স্বাভাবিক। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি বা আমরা এত বছর ক্ষমতায় আছি; যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছে এবং কারা আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে, আমরা সেটাই বিবেচনায় নিই। আর নিই বলেই কিন্তু আমরা নির্বাচনে জয়ী হই এবং মানুষের জন্য কাজও করতে পারি। অন্তত এটুকু বলতে পারি।’
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের যে পরিবর্তনটা, আমাদের সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ না করতেন এবং যতগুলো দুর্যোগ এসেছে, তা মোকাবিলায়… আমাদের কত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। করোনার সময় তো মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, সেবা করতে গিয়ে আমাদের অনেক সংসদ সদস্য এবং নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনসহ সকলকে আমরা কাজে লাগাই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে যদি জনগণসম্পৃক্ত না হয়, দল যদি সুসংগঠিত না থাকে; কোনও সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পারি একটাই কারণে, আমাদের সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল আছে, আমাদের কর্মীরা নিবেদিতপ্রাণ। আমরা যখনই ডাক দিয়েছি, তারা ছুটে এসেছে মানুষের পাশে। কৃষকরা ধান কাটতে পারছিলেন না, বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সহযোগী সংগঠন সব নেমে গেলো, ধান কেটে কৃষকের বাড়িতে তুলে দিয়ে আসলো। করোনার সময় চিকিৎসায় তাদের সহযোগিতা করলো। কাজেই মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনা করবো।’
প্রতি ছয় মাস পরপর সংসদ সদস্যদের বিষয়ে সার্ভে করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দেই, আপনার অবস্থা কিন্তু খারাপ। এই এই জায়গায়, এই এই কাজ করতে হবে। আমরা সচেতন বলেই কিন্তু ইলেকশনে আস্থা পাই, জনগণের ভোট পাই এবং জয়ী হই, সরকার গঠন করে আজ পর পর তিনবার দেশের উন্নতি করতে পেরেছি।’
সাংবাদিকদের জন্য ঘোষিত ‘নবম ওয়েজ বোর্ড’ অনেক গণমাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে দশম ওয়েজ বোর্ড ও টেলিভিশন কর্মীদের জন্য ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মসংস্থান যাতে ব্যাপকভাবে হয়, ১৯৯৬ সালে আমি সরকারে এসে টেলিভিশন-রেডিও বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেই। সে জন্য এখন শুধু সাংবাদিক না, শিল্পী ও টেকনিশিয়ানসহ অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছেন। একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এটা আমার মাথায় ছিল। অনেকে (বেসরকারি গণমাধ্যম) এটা করার সাহস পায়নি। তখন একটাই সরকারি টেলিভিশন, একটাই রেডিও ছিল।’
ওয়েজ বোর্ড গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি চ্যানেলের মালিকরা…কিছু মালিক তো এখানেও বসে আছেন। এটা তো তাদের দায়িত্ব। তারা যাদের দিয়ে কাজ করাবেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না। যাদের দিয়ে কাজ করাবেন, তাদের ভালো-মন্দটা তো দেখতে হবে। ওয়েজ বোর্ড আমরা দিয়ে দিয়েছি, সেটা কার্যকর করার দায়িত্ব মালিকদের। মালিকদের আবার কমিটিও আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু বার্তা দেওয়ার দরকার, সেটা দেবো। কিন্তু এখানে যারা মালিক তাদেরই কিছু করা উচিত। সাংবাদিকদের একটা কল্যাণ ফান্ড করে দিয়েছিলাম, সেখানে অনেকেই কিছু কিছু টাকা দিয়েছে, কিন্তু সবাই তো দেয় নাই। মালিকদের বলবো, ওয়েজ বোর্ডটা কার্যকর করে দিয়ে সাংবাদিকরাও যাতে… তারা তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দেয়, কাজ করে, তাদের ভালো-মন্দ তো দেখতে হবে।’