ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কার মধ্যে এ সপ্তাহে ইউরোপে বাড়তি সেনা পাঠাতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ফোর্ট ব্র্যাগ সামরিক ঘাঁটি থেকে ২০০০ সেনা পাঠানো হবে পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে। তাছাড়া, জার্মানিতে থাকা আরও এক হাজার সেনা যাবে রুমানিয়ায়।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনে যুদ্ধে নামতে রাশিয়াকে প্রলুব্ধ করছে বলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভিযোগের পরপরই ইউরোপে মার্কিন সেনা বাড়ানোর এই ঘোষণা এল।
তবে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সেনা মোতায়েন করছে তারা ইউক্রেইনে যুদ্ধ করবে না, বরং মার্কিন মিত্রদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে বলে বুধবার জানিয়েছেন পেণ্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি।
ফোর্ট ব্র্যাগ ঘাঁটি থেকে ২,০০০ সেনার মধ্যে ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের ১,৭০০ সদস্যকে পাঠানো হবে পোল্যান্ডে এবং ৩০০ সেনাসদস্যকে পাঠানো হবে জার্মানিতে।
আর জার্মানির ভিলসেক ঘাঁটিতে থাকা পদাতিক বাহিনীর প্রায় এক হাজার সেনার একটি স্ট্রাইকার স্কোয়াড্রন পাঠানো হবে রুমানিয়ায়। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে আগামী কয়েকদিনে পূর্ব ইউরোপে প্রায় ৩ হাজার সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দিয়ে রেখেছেন জো বাইডেন।
পেন্টাগন এর আগে গতমাসেই প্রয়োজন হলে ইউরোপে মোতায়েনের জন্য ৮,৫০০ সেনাকে প্রস্তুত রেখেছিল। এর সঙ্গেই নতুন ওই সেনা মোতায়েনের ঘোষণা বুধবার দিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন।
প্রয়োজনবোধে মোতায়েনের জন্য ওই বাড়তি সেনা প্রস্তুত রাখা প্রসঙ্গে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, “পুতিনকে আমাদের একটি জোরাল সংকেত পাঠানোটা জরুরি। আরও খোলাখুলি বলতে গেলে, বিশ্বকেও বার্তা পাঠানো জরুরি যে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেটোর গুরুত্ব আছে এবং এ বিষয়টি আমাদের মিত্রদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ।”
রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তের কাছে প্রায় ১ লাখ সেনা সমাবেশ করার পরও বলে আসছে তাদের সেখানে আগ্রাসন চালানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধের অজুহাতে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
ইউরোপে নেটো জোট নিয়ে রাশিয়ার যে উদ্বেগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেটিকে পাত্তা দিচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব ইউরোপে নেটো সম্প্রসারণ বন্ধ করা সহ নিরাপত্তার যেসব নিশ্চয়তা রাশিয়া চাইছিল, যুক্তরাষ্ট্র তা অগ্রাহ্য করেছে।
ওদিকে ইউক্রেইন সফরে যাওয়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, পুতিন ইউক্রেইনের মাথার ওপর ‘বন্দুক ধরে রেখেছেন’। কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলার মাঝেও রাশিয়া ইউক্রেইন ঘিরে সেনাশক্তি বাড়াচ্ছে এমন প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইউরোপে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়াটা আরও সক্রিয়ভাবে সামরিক ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী থাকার লক্ষণও হয়ে থাকতে পারে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র কিরবি অবশ্য এখনও আশা প্রকাশ করে বলেছেন, পুতিন শেষ পর্যন্ত সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের পথে আসতে পারেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনও বিশ্বাস করি না তিনি (পুতিন) ইউক্রেইনে আরও আগ্রাসন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।”