বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গঠন করা দেশের প্রথম কমিশন হলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পালন করে চলেছে। বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে ইউজিসির সক্ষমতা আরও বাড়াতে এর আইনি ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বুধবার ইউজিসি ভবনে কমিশনের সঙ্গে ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ’ (ইরাব) এর নব নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় অন্যান্যরা একমত হন, নিজস্ব প্রয়োগিক ক্ষমতার অভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসিকে পুনর্গঠন করে উচ্চ শিক্ষা কমিশন (এইচইসি) করতে হলে প্রয়োজন নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া। তাহলেই উচ্চশিক্ষাকে সঠিক পথে রাখা সম্ভব হবে। এর গুণমত মানও বাড়ানো যাবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এতে সদস্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. এম শাহ নওয়াজ আলি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন এবং সচিব ড. মো. খালেদ বক্তৃতা করেন।
এছাড়া আরও বক্তব্য দেন- ইরাব সভাপতি মুসতাক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজ, সিনিয়র সদস্য আমানুর রহমান, সহসভাপতি এম মামুন হোসেন, কোষাধ্যক্ষ শরীফুল আলম সুমন, সাংগঠনিক এমএম জসিম, দফতর সম্পাদক এমএইচ রবিন, প্রচার সম্পাদক রশিদ আল রুহানী, তথ্য, গবেষণা ও আইসিটি সম্পাদক এনআর সোহেল প্রমুখ।
মতবিনিময়ে দেশের উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ইউজিসি ও ইরাব যৌথভাবে একসঙ্গে কাজ করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সংঘটিত নানা অনিয়ম বন্ধে ইউজিসির কার্যকর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
সভার শুরুতে ইরাব সভাপতি মুসতাক আহমদ বলেন, সাংবাদিকরা ইউজিসির কাছে পেশাগত কাজে সহায়তা চান। ইউজিসিতে প্রবেশকালে গেটে সাক্ষাৎ প্রার্থীর নাম লিখতে হয়। এতে সোর্স প্রকাশ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অথচ মন্ত্রণালয়সহ কোনো সংস্থায়ই প্রবেশকালে এটা করতে হয় না। এভাবে পেশাগত কাজে বিদ্যমান বিধিনিষেধ দূর করার আহ্বান জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাক নিজামুল হক বলেন, সাংবাদিকরা জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখেই কাজ করেন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা, জাতীয় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্বআরোপিত সেন্সরশিপ করে থাকেন তারা। সুতরাং তাদেরকে নজরদারির প্রয়োজন নেই।
অনিয়ম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, সন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ চিহ্নিত করে ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে দেয়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন বলেন, প্রতিবেদনের উপর কাজ চলছে। খোঁজখবর নিয়ে কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি বলা যাবে।
অধ্যাপক ড. এম শাহ নওয়াজ আলি বলেন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যক্তিগত অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাশত করে না ইউজিসি। কিছুদিন আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের কাজে সম্মানি চাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছিল। সেটি তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ওই ঘটনায় জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা এখনও ঠিকই চাকরি করছেন। তিনি বলেন, আর একটিমাত্র বৈঠক শেষে শিক্ষক নিয়োগে প্রস্তাবিত নিয়োগ অভিন্ন নীতিমালা জারি হতে পারে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট অনুযায়ী গুচ্ছবদ্ধ করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন অত্যন্ত জরুরি। এ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভিসিদের বৈঠক হয়েছে। মন্ত্রণালয়েও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এই কাজটি করার জন্য কমিটি রকার ছিল যেটি ছিল না। তাছাড়া বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয় সায়ত্বশাসনের ইস্যুতে রাজিও হচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত বাংলাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হয়ে যায়। এরপর বাকি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ঐক্যবদ্ধ করা সহজ হয়েছে। এখন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছবদ্ধ করে একটি পরীক্ষা নিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীবছর থেকে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছবদ্ধ হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগামী ২১বছরের মধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয় ১৫হাজার ডলার করতে হবে। বর্তমানে আছে ২ হাজার ডলার। এটি খুবই একটি কঠিন লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মানসম্মত হয় তাহলে কোনো লক্ষ্যই কঠিন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় যদি গবেষণা নির্ভর না হয় এবং শিক্ষকরা যদি আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত এবং তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর না হন তাহলে দেশ এগুবে না।
তিনি বলেন, মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোনো দেশ দাঁড়াতে পারে না। পাস করা গ্রাজুয়েটরেকে চাকরির বাজার সৃষ্টিতেও রকার মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমারেকে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে। সেটার জন্যই ক্ষমতায়িত ইউজিসি দরকার। ইউজিসি শক্তিশালী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতাবান না হলে উচ্চআয়ের দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না। তাই জাতীয় স্বার্থে এব্যাপারে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।