বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ ও বিরোধের পর এ নিয়ে রিট দায়েরের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘আপনারা নিজেরা দুই ভাগে বিভক্ত হলে দ্বীনের প্রচার করবেন কীভাবে? নিজেদের মধ্যে মারামারি করবেন, আবার ইজতেমা পালনের জন্য আদালতে রিট দায়ের করবেন, এটা লজ্জার। আগে নিজেরা সংশোধন হন, সুস্থ হন এবং নিজেদের মধ্যকার বিভেদ নিরসন করুন।’
বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার বিশ্ব ইজতেমা পালন সংক্রান্ত এক রিটের শুনানিতে এই মন্তব্য করেন। পরে আদালত এ বিষয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
এদিকে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষকে নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে বিবদমান সাদপন্থি, দেওবন্দ অনুসারীদের মুরব্বিরা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুলল্গাহসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। সোমবার উভয় পক্ষের অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শুধু সাদপন্থিরা উপস্থিত ছিলেন। এ কারণে বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঠিক করতে উভয় পক্ষকে নিয়ে বুধবার আবারও বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সোমবার বিশ্ব ইজতেমা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ঢাকার তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস মোল্লা। রিট আবেদনে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে বলা হয়, পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে জারি করা পরিপত্রের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ, সুন্দর, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে তাবলিগ জামাত পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাঁচ দিন পরই ওই পরিপত্রের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি জনপদে হামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন নতুন মাত্রা লাভ করে। এ জন্য রিটে একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জারি করা পৃথক আরেকটি পরিপত্র বাতিলের বিষয়ে রুল জারিরও আবেদন জানানো হয়েছে। রিট আবেদনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ তিনজনকে বিবাদী করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ওই রিটের শুনানি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মো. নুরুল আমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
শুনানির শুরুতেই রিটকারীর আইনজীবী শাহ মো. নুরুল আমিন আদালতের সামনে মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এ পর্যায়ে ইজতেমা নিয়ে রিট দায়ের করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেন, ‘আগে বিরোধ নিষ্পত্তি করেন, তার পরই রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করা হবে।’ তখন শাহ মো. নুরুল আমিন আদালতকে বলেন, ‘দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা চলছে। দ্বন্দ্ব নিরসন সম্ভব না হলে সরকার দু’পক্ষকে আলাদাভাবে ইজতেমা পালনের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা কার্যকর করা হবে।’ এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু আদালতকে জানান, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বুধবার (আজ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরি সভার দিন নির্ধারণ রয়েছে। ইজতেমার বিষয়ে সেখান থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসতে পারে।’
এ পর্যায়ে বিবদমান উভপক্ষকে আল্লাহকে স্মরণ করে খোলামন নিয়ে বিরোধ মিটিয়ে ইজতেমা আয়োজনের তাগিদ দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্ট ২৭ জানুয়ারি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত বছর ডিসেম্বরে তাবলিগ জামাতের দিলিল্গ মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। এরপর টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ এবং মাঠের পাশের মসজিদ ও মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নেয় স্থানীয় প্রশাসন। বিবদমান পক্ষ দু’টির সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তখন মন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঠিক করা হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর।
উপমহাদেশে সুন্নি মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূল কেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ইসলামিক পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ সালের দিকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।